Thursday, 23 August 2012

দশ ৩


পুনর্বার 


এসব কিচ্ছু নয় , বস্তুত তোমার মধ্যে ডুবে আছি
রঙচঙে সেমিনারের মধ্যে খিদের মত ;
প্রতিষ্ঠিত শারীরিক রূপান্তর মধুমেহের প্রাদুর্ভাব
ঘটিয়ে দিলে সফেদ বিছানায় ঝরে বীতকাম ।
আকাঙ্ক্ষার নদীতে রুপালী মাছ উজ্জ্বল
ঢেউ এ ত্বরিৎ এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত জল কেটে
যে উৎসাহ সৃষ্ট করে দৃষ্টিতে ,
সেখানে লালসা পূর্ণতা প্রাপ্তি নেশাই আমার বর্তমান ।


বস্তুত ভুল হয়ে যাই সমস্ত হিসাব দ্রোহের লেনদেনে
শুধুই শূন্য সংখ্যা , অবিরাম সংগ্রামে লিপ্ত
শরীরক্রিয়,ঘামের প্রতিক্রিয়ায় ফুলের প্রাথমিক রূপ
যা হস্তান্তর যোগ্য , যা গমন সক্ষম
সেসব ফুলের নিচে আস্তানা গারি ,
ভ্রমরের খিদে নিয়ে দীর্ঘশ্বাস ওঠে নির্জন নদী কূলে
এসো কাঙ্ক্ষিত নারী
মর্যাদাহীন শরীর সময়ে লীন হই জৈবিক নিয়মাচারে
বার বার পুনর্বার ।








সহজতম 



বৃষ্টিতে সহজাত রূপকথা হয় , আত্মবিস্মৃতির
অন্তরালে কে মনে রাখে ভিখারিনীর নাভিপদ্ম
ঘন বর্ষায় !
এখানে বর্ষা হয় পাখির ডানায় ডানায় , মৃত পাখির কোটরের
মধ্যে বানভাসি জলের কোলাহল সমৃদ্ধিতে লাফাতে লাফাতে
গবাদি পাশু ধান গোলা তেপান্তরের পেড়িয়ে ,
কে মনে রাখে ভিখারির ন্যাংটো জ্যামিতিক রসায়ন !

ডিনার টেবিল , জ্বলতে থাকে চাঁদ , অসৎ রাত্রির
প্রহর গুলো যেন প্রেমিকার স্তন , লুফে নাও , নগ্ন করো
ঘুমন্ত অঞ্চল , বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো - বিচ্ছিন্ন থেকে
সমাজের রস চুষে চুষে ছোঁবরা ফেলো ভিখারিনীর গায়ে ,
সেও প্রতিরোধহীন অনন্ত বুনে বুনে --
এবার নিঃস্ব ;




সুকান্ত 



খিদে , পাক খেতে খেতে , পাক খেতে খেতে
মুচড়ে ওঠে নাড়ি , জিহ্বায় বিস্বাদ পিত্তরস ,
জল ঢালো গলায় , পুনশ্চঃ ঢেঁকুর উদ্গিরন , তখন
স্বাদকোরক গ্রন্থি দ্রুত জালিকা বিন্যাসে সুসম্নাকাণ্ড দিয়ে
খবর পাঠায় ঊর্ধ্ব মস্তিস্কে ;
মহারাজ মস্তিস্ক খানিক নিবদ্ধ থেকে নিজ স্থানে
দ্রুত পরিচালন করিয়ে দেয় দ্বেষ ,
যারা সংযমী তারা পেটে গামছা বেঁধে খাটিয়ায় তৃতীয় 

বিশ্ব দেখে , যারা সন্ধিহান অথবা প্রতিবাদহীন অথর্ব
তারা ভবিতব্য কিম্বা ঈশ্বরে গালাগালি করেন , আর
যারা মাথা টা রেখেছেন নিজের মাথায়
তারা প্রত্যেকেই একটা সুকান্ত ভট্টাচার্য ।








দুই 




কন্দর্পহীন এই অন্ধকার আমার
আমার পালিত বর্তমানে তাদের সুখভোগ ফলিত বিজ্ঞান
আমার আত্মাভিমানে শঙ্খনাদ শব্দ
আমার মৃতমুখ তরবারি অগ্র ।



দ্দদ্দদ

এ সুখের সময়ে গান নেই
এ সুখের সময়ে প্রজাপতি হুতুম
এ দিনান্তে অভুক্ত সারি সারি মৃত ঈশ্বর
এ পৃথিবীতে শকুনের উৎপাত , এবার ভাগাড়




উন্মাদ

আমার ঈর্ষা হয় ভাতের থালা থেকে মাংসের গন্ধ উঠলে ,
আমার ঈর্ষা হয় পার্সের মধ্যে গান্ধী মূর্তি মুখ দেখিয়ে
আবারও পার্সের মধ্যে ঢুকে গেলে ,
আমার ঈর্ষা হয় সো-কেসে বেবিফুডের মুখ দেখানো বিজ্ঞাপনে , বরং
এসো এবার প্রকাশ্যে যুদ্ধ হোক ধান খেতে
আমার কাস্তে তোমার কাস্তে , বরং
প্রাত্যহিক অনাহারী থাকার যুদ্ধ হোক ,
আমার হৃদয় খচির মানচিত্রে দ্যাখো উজ্জ্বল দেশ , সবুজের আস্তারন,

সবুজ বিপ্লবের পট আঁকা , খাটি সোনা
আমার উচ্চারণে দ্যাখো অভাব , আমার দেশ , আমার জনগণ ,
আমার স্বপ্নে দ্যাখো ঈশ্বর সম্বন্ধীয় ভাবাবেগ আত্মসমর্পণ কলা
স্থির প্রত্যয়ে যুগ যুগান্ত ধরে ভাস্বর ,

সমস্ত জ্যোতিষ্কপ্রভা চন্দ্রিমায় উজ্জ্বল ভাস্কর্য আজীবন
ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ায় সমমুখী সমভাবে উপেক্ষার সীমানা উপ্রে জীবনের গানে ,
অথচ , তোমাদের প্ররোচিত শরীর যা দুদিনের ভ্রান্ত নভেশ্চর-----

চিরদিন এই গর্ভগৃহে আমাদের জন্মের ইতিহাসে
উপেক্ষার অনলে পুড়ে রচে যাই তোমাদের ইতিহাস ।




গুঞ্জন 


সমাধি ফলকে লুপ্তপ্রায় অক্ষরগুলি এযাবৎ
সূর্যমুখী থেকে সূর্য প্রতিদ্বন্দ্বী , কেননা সূর্য অনেক পথ
যাবে বলে পথ করে নেয় , সমাধি সেসব উত্তরণ দেখতে
দেখতে ফুটন্ত নক্ষত্রর নিচে আধো-ঘুমে হেমন্ত-বসন্তের
নব নব উচ্চারণে প্রশস্তি লিখে রাখে , সমাধির সমগ্র
প্রতিশ্রুতির ভগ্ন পাদদেশে নিখিলের অবিশ্বাস দৃশ্যকলা
এই পরিত্যক্ত মৃত্তিকার জমা হয় ।

এখন নক্ষত্রলোকের নিচে ভাঙ্গা কান্নার স্বর নির্বাক রাতে
সত্বর ব্যথিত সময়ের শরণার্থীর মত ঝরে পড়ে ,
গুঞ্জন , দ্যাখ মাইগ্রেশন পেয়ে জীবনের দ্বিতীয় যাত্রাপথে
আমি একা , বহু রাত শুয়ে আছি খোলা পৃথিবীর নিচে !

সেই সব প্রতিশ্রুতি জেগে উঠলে মনের সাথে সর্বদা খেলা করে
রামধনু নির্ভর সেসব শ্রাবণ , আর উৎকীর্ণ হৃদয়ে
আঠারোর উতরোল ধ্বনি --
সে সবের ফসলের পরিনতির দিকেই তো যাবার কথা ছিল !

এখন এই নিঝুম নিস্তব্ধতায় শঙ্খচূড় সাপের শীতঘুমে
অনন্ত রাত , কামনার বিষের থলিতে পরস্পরের আমাদের
অবিশ্বাস ক্রমান্বয়ে বাড়ে -------
তুমুল হ্রস্বধ্বনি গ্রাম থেকে ভেসে আছে এদিকে-----
এসো এবার পাশাপাশি থাকি ফলকে মুছে যাওয়া অক্ষরের অভ্যন্তরে ।




 আছি 


কবে থেকে আছি , চুপচাপ ;
শরীরের ঘ্রাণ মেখে পোশাক পাল্টে পাল্টে
শিখে নিয়ে ভাষা , মানুষের মুখ , মানুষের তির্যক মুখে
অহরহ শীত বসন্তে
গান , বিন্দ গানে কীর্তনের ব্যথাতুর হৃদয়ে এঁকে প্রেম
রাত্রি আর দিনের কাব্যের সম্মেলনের দিকে দিক্বিদিক হেটে
রঙ মেখে , সুগভীর রঙ মেখে
ছুঁয়ে ছুঁয়ে পাখির বাসা শ্মশান চিতা কাঠ 

উজাগরি বাথানে - গোময় আল্পনায় উঠোনের সিগ্ধ সকালে
সূর্যের রঙ্গিন পুচ্ছ ধরে কালাতীর্ণ নদী প্রবাহ ঢেউ
সুনীলের অকৃপণ শব্দ সম্পাদনায়
পৃথিবীর আবহসঙ্গীতে রঞ্জিত হৃদয়ে বারোমাস , বারোমাস
ক্ষেত- খামার কৃষাণী বধুর ঘামের গন্ধে , আহা , কাঁঠালের
গন্ধে বুনো মাছি এঁদো পুকুরের ল্যাঠা মাছের
কুচের পলল অন্ধকারের যাপন ,
শহুরে শারদীয়া
নিয়ন বন্যায়
কংক্রিট খেটে খাওয়া হাত-পা , লোকাল ট্রেনের পণ্য

এসব কবেই হয়ে গেছে মলিন থেকে মলিনতর ,
ঢের পথ হেটে হেটে ক্লান্ত প্রাণে ,
ওহে , কে বাঁজাও তুমি বাশি ?
এ গন্তব্যে ঝরে গেছে দৃষ্টি , অপর্যাপ্ত হৃদয়ে বেদনার আবহমান
অন্ধকারে কে তুমি - কে তুমি
সৃষ্টি করতে চাও সুরেলা সঙ্গীত ?
একবার এসেছিলাম এখানে , তার পর মানুষ , মানুষের ভিড়ে
কৃপণ থেকে কৃপণতর এ হৃদয়ের
কোন সে দাওয়া আছে , সেখানে বসাই তোমায় ?





তরুন কবি 



তরুণ এক নির্ভেজাল কবি , শব্দ ডাকছে আয় , তবুও
চাইবাসা নেই হারুন অল রশিদের রাজ্য নেই বেহেড মাতলামি
আছে চুল্লু ঠেকে , বাবার পেনশনের টাকাতে যেসব কবিতা আসে
মনে তাতে সমাজ নেই , অবক্ষয় নেই
শুধু নিজেই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে ,
গভীর রাতে আনাগোনা শুরু হলে মিত্রাক্ষর ছন্দের
তাকে পাত্তা দেয় না নাগরিক কবি
এক বিশ্ব হন্তক চেতনা কুড়ে কুড়ে খেয়ে গেলে অস্তিত্ব
কবি লেখেন " প্রেম এই জীবনে আর কত দুঃখ দিবি তুই ? 


সায়ক ২৫ 

হেমলকের তৃষ্ণা এসেছে জীবনের প্রতি ,
অক্ষরের ওপর অক্ষর চাপিয়ে যতই যাপন বিভ্রান্ত করি
ওহে নাগরিক কবি জীবনকে ফাঁকি দিয়ে শব্দের প্ররোচনায়
কোন অন্ধকার স্পর্শের পড় আমার সূর্য-ভোর ?
ঈশ্বরের লীলাভূমি ফুল-ফলের প্রাগৈতিহাসিক মুগ্ধতা নিয়ে
নশ্বর জীবনের আয়ু রেখা দীর্ঘজীবী হোক অন্য সকলের ,
এক দিকে এই শব্দ নেশা অন্য প্রান্তে বুভুক্ষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গের
প্রাত্যহিক হাহাকার ------ বলো , বলো কবি 

কোন সময়ের কথা বলে ?
ভেবেছিল মন জীবনের যা অপূরণীয় ক্ষতি মিটিয়ে নেওয়া যাবে
শব্দে শব্দে বন্ধুদের হৃদপন্দনে ,
সংকীর্ণ জীবনের পথে ঋণ বেড়ে যাই সময়ের কাছে , তবুও
তুল্যমূল্য বিচার ব্যতিরেকে জড়িয়ে ধরি যেসমস্ত বৃক্ষ
ছায়া দেবে , দেবে সুমিষ্ট ফল -- আর রসনার অঙ্গ
পরিতৃপ্ত হ'লে -----------------
কিন্তু ঐ পর্যন্তই , যে সময়ের কথা বলি সে সময়
কল্পনার রাজত্বের বাস্তবের কাছে অসহয় , বড় অসহয়

সায়ক , এই কবির অনুমতি প্রত্যাশায় দিন আসে না খিদে আসে না ।
মাথার কোন এক অভ্যন্তরে শব্দ এলে ভুল করে ----
চোখের জল গাঢ় অভিমানে ঝরে গেলে শব্দে
কোথা থেকে হাততালি শব্দে ভ্রম ভাঙ্গে মনের --
নিজেই নিজের কাছে জোকার , সকলে ভাবেন কবিতা লিখেছে খাসা ।










No comments:

Post a Comment