Thursday, 23 August 2012

দশ ০৭


তিনি 


তিনি যেই ভাল বাসতে বললেন ,অমনি পাঠশালায় ঘণ্টা পড়া শব্দে
বালকের বই-খাতা-আসন গুছিয়ে নেবার মত দ্রুত
তাই 
আমরা সরে গেলাম তার কাছ থেকে ; 
যেই বললেন সম্পর্ক মায়া শরীর শুধুই বর্ম , শরীরের মৃত্যু
হয় , চেতনা অনন্তবিলাসী ---
সেই আমরা দশটা কুরুক্ষেত্র বানিয়ে উপঢৌকন পাঠালাম 
তার দ্বারে , সেও স্মিত হেসে গ্রহণের ভঙ্গিমায়
বললেন " তবে তাই হোক সভ্যতার নাম যুদ্ধ " 


ইদানীং আয়ুরেখা লেখে বৎসান্যয় কুঠিতে ,
ইদানীং সমস্ত কুরুক্ষেত্রর পরিকল্পনা মাথায় , শেষ বুকে ,
ইদানীং ভ্রাতৃহন্তক রক্তে রঞ্জিত হস্তিনাপুর ,

এবং এখন তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে , কবীর'কে মন্ত্র শেখাচ্ছেন
লালন'কে দেহতত্ত্ব ,
আর প্রতিটি অমাবস্যায় রাতে এদের উদিত হতে বলেন -

বছরে একবার বিশেষ পূর্ণিমা আসে ,
চাঁদ গাই প্রার্থনা সঙ্গীত ,
অলৌকিক এই জ্যোৎস্নায় যিশু মহম্মদ তথাগত পাশাপাশি
আগুনের গল্প লেখে ----

এতকিছু সমস্তই সঙ্গোপনে ,
সে বাঁশি তুলে নিলে পশুরাও হয়ে ওঠে মানবিক সম্পদ !





শূন্য 


একটা জন্ম দাও ; ফড়িঙের জন্ম দাও ।
পাটকাঠির আগাই জিব্লি আঠায় নিবদ্ধ থেকে
ডানা ঝাপটিয়ে জানান দেবো ঈশ্বরে, আমি বাঁচতে চাই ,
অথবা মৃত্যু হ'লেও জেনে জাবেন
বাঁচার নিমন্ত্রণ রাখতে হয় মরণের কাছে ।

অভাবনীয় সংলাপ এসেছে যুগে যুগে , নিমিত্ত মরণের

উপেক্ষার ভাষা শিখিয়েছেন দ্বিজ ;
সাপের ব্যাঙ শিকারের সত্যটা প্রসিদ্ধ যতখানি ততখানি
দ্রোহের আড়তে মালিকের আড়তদারী
এবং কৃপণ হতে হতে তার হাত - আমার ক্ষুধার সাম্রাজ্য ।

সমস্ত ভবিতব্য আহ্নিকগতি ঘূর্ণন
ভোগের সম্মুখে চিরায়ত যাতায়াত সভ্যতার , সময়ের
উভয়পীঠেই নাম লেখা যন্ত্রণার
বহুদিন পড়ে থেকে সুঁড়িখানায় নেশা জমলো না

মৃতবৎ যদি সমস্ত জঠর , কল্পিত পুরুষ মানেই ঈশ্বর ?




আজকের সুজাতা 


পায়াসন্ন , শুকনো মুখের সামনে ধরে সুজাতা ,
সকাল আট পাঁচের বনগাঁ লোকাল জনরোল হরিবোল
স্কুল দিদিমনির পারফিউম উগ্রতা শুঁটকী মাছের বোটকা গন্ধ-
সুজাতা আঁচল ঠিক করে -
রাতের কাঁটা দাগ লুকানোর সলজ্জ প্রচেষ্টা !

ত্রস্ত চোখে নেমে পড়ে গন্তব্যে , ফিরতি পথে আলু- বেগুনে
লোটে মাছে ভ'রে ওঠে ব্যাগ , তিনতে পেয়ারা দু'টো সবেদা 

হরলিক্স এক কৌটা পয়েন্ট ফাইভ মেলোপ্রাস
কর্কট মেলেছে পাখনা মরদের উড়তে কতক্ষণ !

মীনাবাজারের দায়নেই - কিন্তু দায়িত্ব অনেক , আমাদের শখে
সুজাতা বাঁচে ,রোজ পায়াসন্ন রান্না হয়
বোধিবৃক্ষের নিচে তার সংসার -
আর মৃত্যু পথযাত্রী স্বামী শরণাগত ভঙ্গিমায় রাত্রির প্রহর গোনে
প্রতিটি প্রহরে সুজাতা কেঁপে ওঠে
বেঁচে থাকা যন্ত্রণার নামান্তর বুঝি গিয়ে মেলোপ্রাসে ঢাকে আক্ষেপ !

এভাবে , সুজাতা বাঁচে বুদ্ধকে পায়েস খাওয়াবেন বলে ।
মৃত্যুর শেষ অভিমানে অথর্ব স্বামী ---
সুজাতা'কে মা বলেই মানেন -- আমরা ডেকেছি রাতপরী





কার্নিশে 


অনেক বাঁচা হোল কার্নিশে সূর্যের সম্মুখে ।
অথচ আমি আর বৃক্ষ নই তুমিও পক্ষীমাতা নও যে
দু'জনাই পৌষে ঢলে পড়া পশ্চিমের রোদ পোহাবো !

আমিও বেঁচে দেখলাম , তুমিও ডিম তাওয়ালে আমার
ক্ষুদ্র ছায়াই হলুদ কুসুম ভেঙ্গে তোমার বাচ্চা এলো --
নরম ঠোঁটে ঠুকে কাণ্ড শাখাপ্রশাখা তোমার ঠোঁট চুমে
সেই যে আসছি বলে পশ্চিম আকাশে দেশন্তরী হল দেখে 

তুমি কেমন চুপচাপ হয়ে গ্যালে - আমি নিঃস্ব

আমিও যুবক থেকে বৃদ্ধ হলাম বিবর্ণ পালকে বুঝলাম
তোমারও বয়স হয়েছে আমারই মতন ;
আশ্চর্য , কার্নিশের রঙ মুছতে- না মুছতে আমরা বুড়ো --

তোমার সন্তান পশ্চিম থেকে আর ফেরেনি , সেও বোধহয়
কোন কার্নিশে সংসার পেতেছে --- তারও সন্তান চুমু খেতে খেতে
শেকড় ভেঙ্গেছে --

এবার , আমি তুমি দু'জনই হারিয়ে যাবো ---
তুমি গম খেতে কীটনাশকে , আমি জঞ্জালের গাড়িতে -
পূর্ণজন্মের দিকেই বারবার প্রতিবার আমরা দু'জন








উত্তর পুরুষ 


তবে , মুছে যাক জলীয় বায়বীয় শরীর ,
তৃপ্তি দূরে থাক , জয়স্তম্ভ ভাষ্য লিখে রাখে--
নিগাহ সিনে মে কাম পাঠ করে , চাপরাশির যন্ত্রণা
শরবিদ্ধ পিতামহের ইচ্ছাপূরণ মৃত্যুয় অনুকরণে
দগ্ধ দিয়ে গেলে পড়ে থাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছাধীনের ষড়রিপু !

দীঘল চক্ষ থেকে দূরে ঢেউ আর তরণীর বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ
শব্দের আহ্বানে মেঘ ঝঞ্ঝা বাতাসের সুতীব্র 

চেতনার সুবিশাল প্রস্তাব আসে , রক্ত ঝরানো ফুলের
যন্ত্রণা কত বেশী আনন্দ দেবে প্রথম রতি সোহাগের চেয়ে ?

সব জয়স্তম্ভ পাঠিত হ'বে ভাষা বুঝে নেবার পড়ে
সব জ্বালাময় অনুক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যাবে উত্তরপুরুষে ।




বিচ্ছেদ 


শতাব্দী প্রাচীন কিম্বা তার ঊর্ধ্বে থেকেই ব্যাপারটা ঘটছে ।
তুমি পিতৃগৃহে গ্যালে কিম্বা পোয়াতি কালে
আমার ভেতর একটা পশুকে দেখতে পাই , আশ্চর্য
ঠিক আমারই মত ! অনেক , অনেকদিন ধরে আছে
অথচ চরম একাকীত্ব মুহূর্ত গুলোকে ঠিক তাকে খুঁজে পাই

সে পশু আমাকেই বাহন করে আর সর্বাধিক উষ্ণতার পক্ষালম্বি ,
পারতপক্ষে অভয়ারণ্যের হরিন এবং অন্যান্য 

শিকার শরীর থেকে দূরে রাখি ঘটমান বর্তমান বোধে ,
সে লাল ফেলে রোজ রাতে , বলি থাম, থাম ক্ষণকাল-
কুলমান যে এবার যাই ------

এসব প্রাকাশ্যে আনি না , কিছু নিজস্ব জারিজুরি থাকে
অপ্রকাশ্যের অন্দরে , যদি একবার বেড়িয়ে আসে পশু প্রকাশ্যে - আর
বউ এর যদি একটা স্তনের উপর মাথা থাকে
জাজেস কোর্টে লেখা হয় বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ! 







অকাতর 


অকাতর ছড়িয়ে মন্ত্রপূত অহমধ্বনি ,
ওম অবিনশ্বর , জাতক কাহিনী বিক্রমাদিত্য-বেতাল
রেসকোর্সের ঘোড়া জানে না , জুয়া বোর্ডে
তাকিয়েই তার যাবতীয় লম্ফ-ঝম্ফ

কিছুই কি বুঝি ছাই ? পৈতার নবগুণ , নবরত্ন
কাকে বলে ? ধুনুচী নাচের মহাত্ত এবং
সধবার একাদশী কিসের প্রয়োজনে ?


এখনকার আঙ্গিক এবং পেক্ষাপট নিয়ে ফোড়ে কারবার
মাসকলাই এ ইঁদুরের মাটি , লাভ্যাংশ জানি ;

অথচ , উপেক্ষার ভাষা বুঝি , পিত্তক্ষরণ বুঝি
বেশ্যা-রাত বুঝি , সূচের জ্বলন বুঝি

কে যেন , আত্মসন্তুষ্টিতে এই শরীর দিয়ে বলেছিলেন
ধূপের গন্ধ নয় প্রচ্ছাপের কীটে তোর
অঙ্গলীন একদিন নরকের আগেই




মহুয়ে 


ইদানীং তোমাকে ছোবার ইচ্ছাটা দেবোত্তর সম্পত্তি
আগ্রাসনের মত বাড়ছে , এসব বললেই দাঁতহীন
ঠাকুমা বিয়ের প্রস্তাব এলে যেমন হাসেন অবিকল
তেমন হেসে উঠবে , আমিও মাজা পোকা'ই যে ধান
নষ্ট ক'রে কৃষি বিশেষজ্ঞের মত বোঝাতে চাইলে তুমি
কৃষকের মত মাথা নেড়ে বলবে রাখুন এসব --

প্রত্যেক বলিষ্ঠ পুরুষই বোধহয় কোথাও ঘি এর

মত গলে যেতে চাই - মমতায় কিম্বা উত্তাপে
আর প্রজন্ম ধরে কেঁচোর অন্ধ অনুকরণে
ঢুকে যেতে চাই নারীর অন্দরে ; নাহ , এসব বলিনা
তোমাকে , শ্যাওড়া গাছের পেতবুড়ি ভয়ই দ্যাখাই না শুধু
কাকে প্রেম বলে কাকে বলে মায়া মনে রেখেছে পূর্বজন্মের ।

সমগ্র পুরুষালী অভিশাপ নিয়ে দৃষ্টিফেলি লাবণ্যের সৃষ্টিতে
তুমি গর্হিত কাজ ভাবো , আমি দৃষ্টিতে সুখ লিখি , মহুয়া হেমব্রুম ।







জাতক 


আলট্রাসোনোগ্রাফি , কড়করে একটা গাধীমূর্তি দু'খানা
সবুজপাত্তি , আয়রন ট্যাবলেট মাতৃসদনের বনেদী ফিরিস্তি --

অদ্ভুত রোগ এসেছে । এ নগর থেকে গঞ্জ-গাঁ --
চৈত্র সেলের ভিড় মাড়িয়ে ঘরে ফেরার ডাক ,
সে আসছে , তেত্রিশ কোটি দেবদেবী সাক্ষী
আমার রক্ত-ঘাম অজাতশত্রু , আমার উত্তরাধিকার
সূত্রে প্রাপ্য সমগ্র ঐতিহ্য নিয়েই সে আসছে ,

যদি হই আমি তার পিতা , আমি পিতা , আমার
শুক্রাণুতেই তার উৎপত্তি আমার রক্তেই তার বিলুপ্ত ,
লিখেছি আমি , আমি জন্মদাতা , আমি ঈশ্বর , সর্বেশ্বর ।

১৯০ টাকায় প্রতিদিন রোজগারে ঢের শক্তি ধরে , শক্তি
থাকবেই তাতে , আমার ঘাম , আমার অনুভব ঝরিয়ে এসেছে টাকা -
প্রতিটি গাঁথুনি ইটে তার পরম ছোঁয়াই পেয়েছি --

না , না , এভাবে হারবে না আমার শিল্প , আমি শিল্পী
বারবার আমি মরি , বারবার মরতে মরতে জীবনের কথা বলি ।



প্রলাপে এসো

নিপাট প্রলাপ এসো , ভুল প্রলাপে যাপন লিখি -
ধুম জ্বরে কেঁপে উঠলে বুক , এসো প্রলাপ ।
যদি সে আসে , আহা , কনকচাঁপা গন্ধে -
আত্মা বেহমিয়ান ! হংসীনি পালকে সূর্যারঙ মেখে আসে-
যদি সে , শ্বেতশুভ্র মৃন্ময়ী , দেবী , দেবী আমার --
অমরাবতী'র নাগরিকের মত বলিষ্ঠ কিন্তু মৃদু
ঐশ্বরিক স্বরে " কেমন আছিস ? "

তবে কি এত দিন মনে পড়ে নি ? প্রলাপ বুঝি মায়া চেনে ?
এভাবেই বুঝি আসতে হয় বিপদে ?
এভাবেই বুঝি অন্ধকার ভাঙ্গে সন্ধ্যারতি ? এভাবেই
বাখারির ফোঁকর থেকে অন্ধকারে চামচিকে উড়ে গিয়ে
খবর দিয়ে আসে তারে ?

যদি মরে যাবো হঠাৎ - তর্কাতিত সত্য ,
যদি পেত হয়ে যাবো , এই বিশ্বাস সর্বাঙ্গে , একবার , আর একবার
তোমার পদযুগলে কেঁপে উঠুক ঘর
তোমার রাঙ্গা ওষ্ঠে - আমার কপালে শুরু হোক শেষ
উষ্ণ উৎসব --

অথবা , মরণের আগে এই প্রলাপেই রেখো -- প্রতিটি
রাত্রি আমি তুমি আর আমাদের সন্ধি বিচ্ছেদ








বিষ রেখেছিলে উজার পাত্রে তবু মৃত্যু আসেনি ;
অন্ধের যষ্টি'র মত ভুল পথে ঠোকর খেতে খেতে
বয়স মেপেনিই ,
এ শহর এখনও যুবক হয়নি - যে
কাজের মানপত্র হাতে দিয়ে বলবে , " তুই কবিতা লেখ "
দুই 



০২ ফ্যালফ্যাল চোখের অভ্যন্তরে স্বপ্ন আর খিদের আগমন ,
জানি , একদিন পরিস্রুত জলেও 

ব্যাঙ্গাচি মেলবে ধর্মের গান
লীন হ'বে তীর্থ যাত্রা যাত্রিকের চেতনে
কে দেখাবে পথ --
শিশুর মুখে কে তুলে দেবে ভাত ?




বাই ফোকাল
চলো , তবে মেলপাসের ঘ্রাণ মাখামাখি হোক
নাভিতে , পাইন ফার্নে সূর্য খুলেছে গলা হবে দেহাতী
সঙ্গীত , নতিদূরে বাইসনের পায়ে ডুবে গেলে
গোধূলির আবহসঙ্গীত -- আঁধারের
তরঙ্গে চুরমার বনস্থলী ;
রাগান্বিত ভঙ্গিমায় পঞ্চমীর চাঁদর , হুটোপুটি তৃষ্ণায়
নদীর ধারে উগ্র কেশররাজ ক্ষুদ্র হরিণী
বুনো গন্ধ ---- 

তোমার এলানো খোঁপার বন্ধন ভিন্ন ভঙ্গিমায়
ঈশারার ভাষাতে বুঝে নাও রাতের মুদ্রা ,
অপার বিস্ময়ে লাফাতে লাফাতে তারারা করে দেবে পথ
শিরশির বাতাস পশু কোলাহল
এসো , এসো প্রেম চিনে নি , কবেকার অন্ধকার ।

মন্ত্রমুগ্ধ চাঁদের আড়ম্বরে দু'জনাই পরাজিত হয়েছি ,
আরাধ্য দেবতার সুগন্ধে কলকাতা ঢেকে গেলে তোমার কাছে --
আসে শারদীয়া মহিমান্বিত রঙ , যা তুমি চেন
মথ ফার্ন টিয়ার পালকের মত
আমি নর্দমা বুঝি ;টিনের ফুটো ভেদ করে বৃষ্টির রূপান্তর
বুঝি ভেজা খাটের প্রচ্ছদে ,

সব থাক আজ , গাছের পশুর জলের প্রকৃতিতে এসো ;
বাইফোকালে যে রঙ খেলে আকাশে সেটুকু শুধুই ধন্দ ,
অত্যাশ্চর্য রঙ জীবনের সপ্তসুর জেগে থেকে তোমার
গোপন তরবারি অগ্রে তোমাকেই ধ্বংসের মহিমায় !












No comments:

Post a Comment