Thursday, 23 August 2012

দশ ০৫


এর নাম 


অরণ্য ভাষা জানে কথা লেখে বহুমাত্রিক ,
অথচ , ম্লানতর হ'লে তোমার মুখ
চৌকাঠের এই পাশে রাঙে বসন্ত ,ফাগুণ অভাবনীয়
যুবক দিন রাখে , কল্পনাতীত যে সখ্য ছিল অন্তরের সাথে
অন্তরের তারা ব্যথা পাই ,
হরিণীও বধ্যভূমিতে প্রভূত জন্ম দিয়ে মরণের আগে ক'রে
সৃষ্টিকে সমৃদ্ধ ; তারা মৃত্যু জেনেও কচি ঘাসে মুখ রাখে
জন্মের মধ্যে মৃত্যু দাগ দেখেও 

বাঘ-হরিণী এক ঘাটে জল পান - একই ভূমি ক্রিয়াভূমি ।

মেয়ে , তটভূমিতে দাঁড়িয়ে থেকে দ্যাখো জোয়ারে ঢেউ পা
ছুঁয়ে যাই শিরশির অনুভব এই টুকুই তুমি মেয়ে
ভাঁটি ঢেউ সরে গেলে পায়ের নিচে বালি ,জলশূন্য আদিম
হাহাকার - পুনরায় জল ছোঁয়ার ইচ্ছাকে বলে মেয়ে বেলা !

কাদের ভাষা শেখাবে তুমি ? ভালোবাসা দিতে পারো জানি
গ্রহনের সক্ষমতার সেই হাত কৈ ?
যে হাত বলীপ্রদত্ত যূপকাঠেও চিৎকার ক'রে বলতে পারে
মৃত্যুতে ভয় নেই , ভয় শুধু তাকে হারিয়ে যেতে হ'বে  এই বেলাই 




জলদেবি


প্রগাঢ় দেবী , জলের ভেতর
প্রতুল নির্বাক মোড় , শোধিত বারি , ওখানে
মৎস্য কন্যা রেখে বানজারা চন্দ্রিমায় স্বচ্ছ জলের ফলকে
কি সৃষ্টি লেখো তুমি , অদ্ভুত ?

কৃপণ শাখাহীন বৃক্ষরা ভাষা জানে ,
জলের সর্বত্তম উপযোগী ব্যবহারের অনুমতি পেয়ে শেকড়
প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিলে হৃদয়ে মহাকালের হরি ধ্বনি 

নৈশব্দে বাতাসের স্নিগ্ধ বিপ্ললে নবমুখ !

প্রগাঢ় দেবী , তোমার গঠিত শত সহস্র অযুত কোটি
জলপোকা কীর্তিমান পললের অভ্যন্তরে
প্রাজন্মিক ফসিলস শুভ্র মুক্তা'র তাপে -অনুতাপে
বিস্তীর্ণ আমার অহংকৃত জগতে
নিত্য শোকের আসর , অনাদায়ী খাজনার মত
পড়ে আছি সুদ বাড়িয়ে কিসের অভিলাষে ?

দেবী , সমস্ত ঈশ্বরীকন্যা , দানপত্র তুলে ধরো অভুক্ত হৃদয়ে ,
মৃত্যুর ঐতিহ্যে ছায়া প্রেম হয়ে থেকে , বলো ,
কোন সাতরাজার ধন আছে যে যক্ষীর
বুকে লীন হ'বো একদিন ?







এক পুরুষের জীবন 


কারসেডে ফিরতি আপ ট্রেন দশ ঘণ্টা বিশ্রাম নেয় --
ঠিক ঘড়ির কাটা মিলিয়ে সোয়া এগারোটাই কিছু
পঙ্গপাল জি আর পি ফাঁকি দিয়ে ঢুকে যাই ট্রেনখোলে ।
ছোট্ট যে সাত মাসের তার ওপরেরটা দুই, সাড়ে তিন বছর
নিয়ে জনা চারের গোছানো সংসার ।
বেগুন পোড়ে , আগুনে পড়ে শুকনো লংকা , হাঁচি
ওঠে , কিলবিল করতে করতে ছোট শিশু "মাই" খোঁজে ।
এ শহর আমার , ওহে আমার । দিয়েছে গগনচুম্বী 

সোসাইটি কালো রাস্তা গঙ্গাগল , ওহে দিয়েছে ডেঙ্গি ।

ধুম জ্বর মায়ের । আজকের পূর্ণিমা- জ্বরে ছারখার করে
দিচ্ছে মায়ের শরীর , অসীম অঞ্চল থেকে এসেছে জন্ম , বাপ --
আহা , নধর নবদূর্বাদল শ্যাম , আঁধারে এসে আঁধারেই
লুকিয়ে আছে কোন আঁধারে !

ঘন ঘন ফ্ল্যাশ ব্যাক , ব্যাক ব্রাশ চুলে , অহিং অহিং লেডী
সাংবাদিক , ব্রেকিং নিউজ -----
শহরের হার্ট থ্রব " কলকাতাবাসি , রাতে মশারী টানিয়ে
ঘুমবেন , স্টোন ম্যানের থেকেও ভয়ঙ্কর মশা "

ব্রেকিং নিউজের ছবিতে দেখছি -- ছোট্ট শিশুর ঠোঁট মায়ের
স্তনে , ক্যামেরার ফ্ল্যাশের দিকে চেয়ে আছে দুই মেয়ে ---





থার্ড ল

অতঃপর কোষ মৃত ঘোষণা করলেন ডাক্তার ।
আগে --

বীভৎস ক্ষিপ্ততাই খোল তৃতীয় দ্বার প্রবেশের অধিকারে --
উজ্জীবন আঙুল যেন পঞ্চরত্ন
ভুখ চেনে , নিঃশব্দ , বিপ বিপ যেন হাজার হাঁফর
ক্রমান্বয়ে আগুন উশকে দেয় কারিগর 

অপ্রতিসম ভাঁজ , টানটান শিরদাঁড়া জলে ভেজা কাক স্থির
মৃদু ডানা ঝাপটানি
নিস্তব্ধ রাত্রি লিখছে নিষিক্তকলা , সমস্ত সন্তুষ্টি- অসন্তুষ্টি
প্রাচীনপন্থী ভাবাবেগ
থেঁতলে বাই দ্যা ওয়ে অন ওয়ে তে এসো , নেশাগ্রস্থ শরীর
রাস্তা চাই , রাস্তা ---
বিষ ঢালা পথ চাই , তর্জনী উচিও না , মোহ শেখ
অতলে নামো -- আসন , টাটকা আসন আমদানিকৃত
ব্ল্যাকবেরি'র রসনায় ,
হুইপ দিয়েছি , হুইপ
বাই দ্যা বাই, শোন , আর্তনাদ ছাড়ো , চরাও হও
প্রতিক্রিয়া দাও , তৃতীয় ল এর প্রতিক্রিয়া
ইউ মাস্ট বি এঞ্জয় , আম সিওর
ওঠো , ওঠো সিলি গার্ল , নেভার কাম এগেইন , এই মুগ্ধতা

হিপি সরিয়েছে , জ্বালাতন , লকলকে জিভের ক্ষরণে
দ্রবীভূত হও ----
সুগভীর মুদ্রাভুতে লীন হও, বিমূঢ় সনাতনী প্রবাদ খুলে দ্যাখো
আধুনিক খেলছে বুকে --

মিটিয়ে দাও , মিটিয়ে দাও জন্মদাগ , ক্রিয়া দিয়েছি - প্রতিক্রিয়া দাও ।







শেষ 


একটা অনির্বাণ আগুন রেখেছি ,
সেখানে এসে পুড়ে যায় গার্হস্থ শ্রম , ম্লানতর
চোখে চতুর্দশী জাগে , ভাবলেশহীন কবিতা জন্মে ,
আপাতসিদ্ধ ভঙ্গিমায় পথ ভাঙ্গে ---
জনরোল ক্যাফে থেকে থেমে গেলে পড়ে থাকে
দীর্ঘশ্বাস পিন ড্রপ সাইলেন্স
অডিয়েঞ্চ নাটক দ্যাখে অভিনেত্রির অন্ধকার নয় !

অব্যর্থ হিসাব লিখে রাখে ভাড়াটিয়া কড়ায়গণ্ডায় ,
কানাকড়ি অমূল্য সো-পিস শোভাবর্ধক ,
বিরহ সঙ্গীত থেকে সুর বাজে অন্তঃকর্ণে - যদি
কুহক , কুহক মায়া , শব্দ পোকা কিলবিল , বলি
থাম , ঢের রাত আছে কালো --
ক্ষিদে আছে , ক্ষিদে থাকে ,
ফুসফুসে জমে আছে অন্ধ প্রত্যয় ।

অন্যথায় দারিদ্রে শিল্প নাচন ,পিত্ত গলে গলে
চোঁয়া ঢেঁকুর্ , তলপেটে চিনচিনে ব্যথা , জল সাথি --
সে জানে সত্য সমুজ্জ্বল
কবিতার সুমহান ঐতিহ্য , লিখেছেন কত ক্ষুধাতুর প্যাঁচা
রাত জেগে ,পেটের পোষণের অপরাগে দেশ ।

পরিষ্কার হবে একদিন সম্মুখ দৃশ্য কুক্ষিগত বাস্তিল সম্রাট , দুর্গ ,
যক্ষ্মাতে নাম থাকবে সম্রাট "নিরো'র " যক্ষীর ধনের ভাগ
অপরাহ্ণময় শৃঙ্খল গোধূলি দেবেন সকল সন্তান'কে ---

এই কবি একদিন , সেবার স্বাধীন --
এই অক্ষরের পূর্ণতা পাবে অষ্টমগর্ভ জাতকের শাসনে -
সেবার কবিতাও স্বাধীন











বন্ধুগন

আসার ব্যাপারে হাত ছিল না , জেনে রাখুন বন্ধুগণ ।

যাবার বেলাই সব লিখে যাবো , প্রহসন , যবনিকা
পতনের দৃশ্য আঁকা হবে ---
যতবার মানচিত্র থেকে হাঙর বেড়িয়ে এসে বলবে "খেতে দাও
নইলে মা'কেও খাবো " ,
সপ্তসিন্ধু থেকে সুদর্শনা মৎস্যকন্যার শীৎকার শব্দ
ভোগের ব্যাঞ্জনে তৃপ্তির গন্ধ উঠে এলে
শিশু যদি বলেন " ভাই কৈ ? " -----
আমি শ্যালা দেখিয়ে দেবো দেশ , খা , খা , চেটেপুটে খেয়েনে ,
নাগরিক হতে গেলে দেশ খাওয়া শিখেনে

বন্ধুগণ , এত্ত সহজে যাচ্ছি না । আবহমান রক্ষিতা জন্ম
ভোগের কাছে , ইজ্জৎ ইজেরের নিচে নয়
শরীরের ঊর্ধ্বপ্রদেশে , সেখানেই বেশ্যা জন্ম , সেখানেই
দালাল ভোগী লম্পট
সমগ্র পৃথিবী খেতে খেতে আমার শরীরে এসে থামে --
মনে ভাবি রক্ষা পেয়ে গেছি
দেখি কিছু হাড় আছে সঙ্গবদ্ধ - বাদবাকি গেছে তাদের পেটে ।

যাবো না , আগে মহাকালেরে সীমাহীন ক্রোধে আগে পুড়ুক সমস্ত
বাস্তবতা , আমিও যেতে প্রস্তুত আছি ।


অংক মিল্লে দেবির জন্ম হয়

আপনি দিনে আট ঘণ্টা কাজ করেন ।
আপনার দিনে রোজগার দু'শত টাকা ,
এক কিলো চালের দাম ত্রিশ টাকা,
এক কিলো চাল রান্না হচ্ছে আনুসাঙ্গিক কিছু দিয়ে
মোট খরচ একশতটাকা ধরুন ,
বৌকে একটা নেলপলিস কিনে দিলেন , দাম পনের টাকা ,
পনের টাকা ব্যায়ে একটা দৃশ্যসুখ কিনলেন , তাইতো ?
সন্তান স্কুলে পাঠালেন দশ টাকা , বিড়ি দেশলাই পাঁচ টাকা ,

মায়ের পান-তামাক দশটাকা , ছোট মেয়ের কাশির সিরাপ
চল্লিশটাকা , বাড়িভাড়ার জন্য রাখলেন প্রতিদিন কুরিটাকা
আপনার দু'শত টাকা শেষ ! ভাল খবর ----

আপনার আজকে জ্বর এসেছে , কাজে যেতে পারেননি --
মানে দু'শত টাকা ঘাটতি বাজেট
দু'দিন কাজে যেতে পারেননি চারশত টাকা ঘাটতি ।

বউ সারাদিন কাঁদেন , সন্তানমুখ শুকনো ।
বলুন , জীবন মরবে ?

অতঃএব গৃহবধু , রাস্তা চেনেন না , অন্ধকারে ডুবে গিয়ে
সকালে ভাত নিয়ে ফেরেন









No comments:

Post a Comment