Friday, 22 June 2012

কিছুমিছু ৯



দলিল

কবিতা থেকে উঠে ছুটছে শব্দ পাজল
রাত জাগা অভিমান সংগবদ্ধ দৃঢ় পাঞ্জা
এদের চিনতাম আমি , আমার রক্ত থেকে
উৎপত্তি , এখন তুমি বলছো এ গুলো তোমার নয় !
আমার রক্তে তোমাদের ইতিহাস
রক্ত ভেঙ্গে ভেঙ্গে
সারা পৃথিবী ; আমার পূর্বপুরুষ !

মৃত্যু তুমি যেভাবে লেখো না কেন , দানব
প্রত্যেক রক্তে সনাতনী ধারা ,
আমার পূর্বপুরুষ
গুহা মানবে তোমার পিতা !









ঈশ্বরী কাব্য

হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টির গল্প তৈরি হয়ে যায়
শিল্পের প্রয়োজনে ; অথচ পাঁজর ভোকাট্টা ,
বদ মুখো মেঘ ভাসিয়ে দেয় যখন পাশের গৃহ
বাতাসে শুধুই নহবৎের সুর ! প্রেমও বোধহয়
সাসপেন্স ভাল বাসে , দীন হয়ে উঠলে হৃদয়
আকাশ জুড়েই কাঁটা ঘুড়ির মেলা !

ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নবারুণ অভিমান
রেখে দাও সযত্নে যেমন তোমার ছোট্ট বেলার
হাতের ছাপ রাখা আছে কাগজে ; আজ একটাও
খাতার পাতায় লিখবে না বৃষ্টির গল্প ,
প্রতিটি অক্ষরে অমরত্ব প্রাপ্তি হোক সময়ের গল্প ----
তোমার হৃদয় কাটলে -----
পাঠকেরই রক্ত ঝরবে !

কি জানি , মনে হয় পুরুষের কোন মন নেই ,
পুরুষের শরীর মনের প্রতিদ্বন্দ্বী ; তবুও
আজো উষ্ণ প্রলেপের অন্তরালে জন্ম নেই কিছু বিশ্বাস
কিছু স্বপ্ন সঞ্চারী মেঘের পিছু ছোটে ঈশ্বরী মেয়ে !







ক্রুশ বিপ্লব

ক্রুদ্ধ মনসা লালসায় শব দৃশ্য
লাল রক্ত ইস্তেহার
বুকে আস্ত মানচিত্র মানে বলিভিয়া ;
বনে এতো অগ্নি
তবুও কম ;
বুকে ঈশ্বর নেই , সূর্য নেই
আদর্শের নিশান ল্যামপোস্ট ।

বিপ্লব শিখে নিয়েছে নবাগত ঈশ্বর এই জন্মে
বনে বাদাড়ে

আমিও দেখেছিলাম স্বপ্ন , বিপ্লবের ,
রক্তে মাছিতে বুলেটের অপারগতায় ---
হৃদয়ে , হৃদয়ে
রক্তের উষ্ণতায় , আর এক বুলেট --
লাশকাটা ঘরে ঈশ্বর নেই , কাঁচি ,

নচেৎ আমিও লক্ষ কোটি ক্রুশ খাড়া করতাম !









মাধুরী

তুমি মাধুরী ,
বাংলা ভাল লাগে না বলে ইংরাজি সাহিত্য নিয়ে
দিনরাত উপোষী নবদ্বীপ পণ্ডিত ,
বাংলা কবিতা শুনতে চাও না বলেই
আমার সঙ্গে তোমার আড়ি ,
তোমার বাংলা ভাল্লাগে না , তাই
সময়ে অসময়ে ইংরাজি আওরাও
আমি বুঝিনা তার এক চুল মানে ,
তুমি সেক্সপিয়ার উদ্ধৃতি তুলে দেখাও
কেন পচন ধরে মনে ,
আমি চরম অজ্ঞ ---
জানার পরিধি মায়ের আঁচল
বেশি হলে ময়দানের ঘোড়া দৌড় !
আমার যা জানা জগত তাতে ইংরাজি নেই
নেই বিশ্ব বিদ্যালয়ের কেতাবি ছাপ
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের গন্ধে স্বপ্নালু নয় মন
তোমার আমার মাঝে চৈত্র দাঁড়িয়ে যায় ।

তোমার জানার মধ্যে নেই কোন অজানা
তোমার শরীর নাচে অবিরত উর্বশী নৃত্য
তোমার চোখের মাঝে আদি অনন্ত
তোমার শরীর ছেড়ে চলে যায় কাল

তুমি মাধুরী
তোমার মায়ের শরীর অসড় , বিছানায়
নিস্তেজ জলন্ত মোম ,
বাবার মুখে নিম্বাস মেঘের বাসা
ভাই এর নিষ্ঠুর নাচুনী
বোন প্রেমিকাসহ পিকনিক পার্টি ,
তোমার রয়েছে পড়া , পড়ানো সারা বেলা
পাড়াপড়শির ছাগ ছানা খেয়ে যায়
বিকালে সাধের বাগান
তোমার অবসর নেই এই চোখ দ্যাখা !

আমি বাংলা ভালবাসতে পারলাম না
আমি ইংরাজি ভাল বাসতে পারলাম না
আমি শুধু তোমার জলে ভেসে
বেঁচে থাকতে চেয়েছিলাম







এভাবেও আসতে পারো তুমি , মৃত্যু

সব কিছুই পরিকল্পিত , ঈশারায় ফুড়ুৎ পাখি !
এভাবেই শুরু করা যেত নাটকের যবনিকা পতনের দৃশ্য ;
করছিনা , ঘ্রাণে ঘ্রাণে মুখরিত হোক শরীর
ইলিসের আঁশটে গন্ধ লেগে থাকুক আর কিছুক্ষন গ্লাসে
ঢকঢক এক ঘটি জলে শান্তি পাক পাকযন্ত্র ----
তারপর ----

কত সহজ ভাবেই কাটিয়ে দেওয়া যায় নিঃসঙ্গতা নিঃসীম
সমস্ত অঙ্গীকার ; উচাটানে বদ ঢেঁকুর
ছেঁড়া ইতিহাসের পাতায় বুবুক্ষ মিছিলের পদধ্বনি , না
আমার নয় , চিনিও না সে সব নোংরা পা ,
ওখানেই গলা জড়াজড়ি করে নেব না হয় !

বিদীর্ণ করেছি ভয়ের মহাকাব্য , আসুরিক অভিযানে
নগ্ন করে দিয়ে পৃথিবী বলব হাঙর শিকারি আমি , হারপুনে বিষাক্ত
বিষ লাগিয়েছি --
তুমিও নশ্বর ছিলে মহাভারত যুগে
আর আমি ব্যাধ মৃত্যুর অগ্রদূত !

এভাবেও বলব না ----
আমার বিছানা থেকে উঠে গেলে পুরুষের গন্ধ --- আমি তো মৃতই ---
শরীর নিয়ে গেলে যা যা যা ---
চিতাতে জীবনের রুপ রস গন্ধ ----









সারোগেট মাদার

স্রোত থেমেছে মাতাল নদী'র তবুও জলে লেগে আছে
সাগর ছোঁয়ার অতলান্তিক মাতলামির অভিলিপ্সা ;
নদী'র শরীরে আধুনিক ব্যাধি , স্তুপাকার নিত্য জঞ্জালে
থেমেছে স্রোত । কখনো বাঁধ দিয়ে আকটে জল
ছুঁতে চেয়েছিল রাণীর পোশাক , ছুড়ে ফেলেছিল পূর্বতন
নদীর নিয়মাবলীর ফর্দ !
প্রতিটি নিয়ন রাতে ঘুমিয়েছে যখন গোটা বস্তিবাসী ঠোটে
ঠোঁট রেখে নিয়মের মর্যাদায় ----
নদী পাগল হাওয়ায় খুলে ফেলে অঙ্গসাজ আফিম ভূমী করে
নিয়ে সমগ্র অঙ্গ
হায়নার জল খেয়ে গেছে সারারাত ! অথচ
সব ছিল , জলের অপূরণীয় ভাণ্ডারে ছিল সৃষ্টি ঘর ফিঙ্গে
মাছরাঙার কথা-কাকলি ; এবার চুপকথা হয়ে গেলে
দিনে ও রাতের নিস্তব্ধতা , ভাঙ্গা অতীতের সুমধুর দৃশ্যপট !

আমাকে বাঁচিয়ে রাখো ঈশ্বর তোমার মায়াবী ঘরে , আমার পাপে
হয়ে যাক দ্বিতীয় পুনঃ জন্ম ;
আমিও মেনে নিয়েছি সময়ের যাবতীয় সর্ত , আমার জলে খুলে
দাও দ্বিতীয় নদী'র উৎস মুখ -----
আমার মরণের পরেও বয়ে যাক আমার সৃষ্টি ধারা !









প্রত্যেকটা আত্মচরিত পড়ে যতখানি মুগ্ধতা তাতে মিশে আছে গ্যালন গ্যালন জল ;
এক টা ডিম বড় করতে মুরগির কতোখানি স্নেহ মায়া ভুক আছে জানলে তুমিও নিরামিষ !
অপারাজেয় মানুষের মন সে তুমি এক বিছানায় হাজার বছর থাকো না কেন !
নিজের রক্তকেই ( সন্তান ) বা কতখানি চিনতে পেরেছে জীবন ?
চোখে যা দেখি সেই টুকুই কি সমস্ত দৃশ্য ? দৃশ্যান্তরের দৃশ্য ? আমার দেশ , আমার মা ?
আলুথালু পরে আছে যে সমস্ত যৌবনের রেখাচিত্র অনাহারে ধান কুড়ানির বুকে
সেখানে যৌবন নয় সময় নয় দেশ নয় আত্ম সম্মান নয় শুধুই সন্তান আর ক্ষিদে !
আমরা ভুলে গেছি অহরহ উৎসবে শ্রেণী বিপ্লবের গদ্যময় দুপুর উদাসী বিবর্তনে ।

একদিন কিছুদিন পরে থাকে চাপা অন্ধকারে গয়ায় পিণ্ড দানের রসগোল্লা হাড়ি ----
দু'দিনেই গন্ধ ছড়াবে শরীর আলো থেমে গেলে আর প্রিয়জন দেবেন নাকে রুমাল !









অবিশ্বাসী বন্ধু

সন্দিহান দৃষ্টিতে জেগে থাকে নিজস্ব হীনমন্যতা
অবিশ্বাসে জন্ম দিয়ে যায় কিছু রোগ ; আমিত্বে
যখন শুধুই হারানোর ভয় অথবা অপর প্রান্তের
সৃষ্টি যখন ঘাড়ে নিঃশ্বাস ফেলে ভুলে যায় আমার অস্তিত্ব ! আর
অপারগের অভিমানে ক্ষেপে গিয়ে দ্বিতীয় রিপু
সব সৃষ্টি গৃহ শূন্য , তোরা দ্যাখ
আমি যা লিখেছি শুধু তাই অপূর্ব !
ওরে বন্ধু আমার , বিশ্ব নন্দিত হয়ে গেলে তোমার নাম
আমার ক্ষুধা যায় বেরে ;
আদর্শতার মানদণ্ডে তোমাকেই রেখে আমার এই খেটে খাওয়া
কথা শুধু তোমার নয়
দ্যাখো চেয়ে আমিও নারী বেলা !

এতো সঙ্কট তোমার কলমে কালিতে সৃষ্টিতে ?
তুমি ভাল লেখো বলেই আমার খাতার পৃষ্ঠা জুড়েই আগুন সূর্য
শব্দ ভাঙ্গাচোরায় তুমি নবাব নন্দিনী ---
আমার ভাণ্ডারও রাখিনি অভাবে অপূর্ণ ,
তোমার বিষাদের জন্ম যাবেই একদিন ধুয়ে মুছে !









আত্মঘাতী

হে দাসত্ব স্তব্ধ হয়ে যাও চিরতরে অভাবের তীব্র শেলঘাতে ,
দুর্নিবার ঘূর্ণিতে হাল ভাঙ্গা নৌকার মত এ জীবন বয়ে আর
কি লাভ , এসো অতৃপ্ত আত্মা ডুবে যায় কাল সলীলে একা , একা ,
চঞ্চলতা , মুখোরা পরিচিত জন সমাগম আর একবার প্রাণ খুলে
নিঃশ্বাস নিক পরাজিত মানুষটা চিরতরে স্তব্ধ হয়ে গেছে জেনে !

চিরতরে স্তব্ধ হয়ে যায় আর কতকিছু , কারুর জীবনে অর্থের
স্রোত আসে ঢেউ এর মত , ফিরে যায় না কখনো ?
শুধু রাত্রি গভীর হলে আঁধারের মত সত্য অভাব আসে , বলে যায়
চুপি চুপি -- সব স্তব্ধ হয়ে যাবে একদিন , এইতো সেই খেলনা
জীবন পুতুল বিয়ে আর সন্তান জন্মানোর মেশিন ,
একদিন চোখ বুজলেই সব অন্ধকার মনে হয় -- তখন
কলঙ্ক রাতের তাঁরারা ঈশারায় কাছে ডাকে টোকিও
স্যানফ্রান্সিস্ক ময় ভারত বর্ষের প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত
দাসদের শুধু ডাকে ,
যে জীবন শেয়াল কুকুর অবহেলায় বন্দীত্বের
যারা বলে গেলেন বেঁচে থাকার চেয়ে বড় নয় কোন অধিকার , জন্মের
চেয়ে নেই কোন সুন্দর সময় , তারা ভুল বলে গেলেন কি ?

জানি না , জানতেও চাইবো না আপাতত এখন , শুধু জড় পদার্থের
অনুকরণে একশত বছর ঘুমিয়ে থাকতে চাই -- ঘুম ভেঙ্গে
উঠে দেখি যেন সব্বাই স্তব্ধ হয়ে হয়ে এক তাল অভিমানে !







পেত বিদ্যা

তারা বলেন
ভালোবাসা হয়ে গেলে ইতর শরীর থেকে
মুছে যায় কেঁচোর গতিপথ ।

জান্তিব আকাশ হতে টুপটাপ খসে পরে নারী কলা
ল্যান্ডস্কোপে শূন্য ; হারিয়ে গিয়ে দেশ
নদী শারদ উৎসব
এক মুখী দেবী বরণ !

হারিয়ে গিয়েছে বাবার পেনশন চালে বেগুলে তেলে হলুদে
হিপি তুলে ; ওহে
আমাকে গুলিয়ে দাও মধুতে অথবা
অন্ধ করে দাও দৃষ্টি
তুমি তুমি তুমি -----
আর সব অনাসৃষ্টি !

এবার অপূর্ব দক্ষতায় পকেটে রংচঙে গান্ধী
দাম কমেছে আমেরিকায় ;
ধুস -- বোকা কোথাকার
প্রোগ্রাম রেখেছি দেবো সুড়সুড়ি
লোভনীয় সিনেমা হল !

পেত বিদ্যায় ভাঙছে অহরহ মাথা ---
খাদের কিনারে পৃথিবীর যুবক বয়স !







বিনম্র হতে শিখুক মননের সম্রাট ---
বারুদের স্তুপে ফুটে উঠুক গোলাপের ঝার -
বন্দুকের নলে নেই মায়ের স্মৃতি









বিপন্ন বিস্ময় ভবিষ্যৎ

সেই অপরিচিত ক্ষণে শিমূল পাতা ঝরে গেল অবহেলায় যখন
তুমি অপারাজিতা রইবে বলে দীর্ঘ সাতদিন চৌকাঠ ডিঙিয়ে
উঠোনে পা ফেলো নি
দাঁড় কাক তবু নিস্তব্ধতাকে খান খান করে দিয়ে গেল
এক কর্কশ কণ্ঠ স্বরে !
ভেবেছিলাম রোদ্দুরের অসীম করুণা শেষ হলে
চাঁদ ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠবার একটু আগে
নাম না জানা পাখির ঘরে ফেরার লগ্নে
কানাকুপুর পারে হতেও পারে দেখা -----
সেই তো পরিচিত কণ্ঠ স্বর
ক্ষণিকের জন্য মেঘের রথে চরে আকাশ সফর -----
অথবা কেঁচোর অনুকল্পে মাথা গোজা মাটির অন্দর !

পাঠক , সুমতি পাঠক
এই একবিংশ শতকের প্রথম অধ্যায় জুড়ে হোম টাস্ক
কলেজ কেটে ম্যাটিনি সিগারেট চুম্বন
গানে নাচে শেকড় তুলে বৃক্ষের পরিচর্যায় !
আমি শুধু জানাতে চেয়েছি ---
যত অভাব আসে আসুক , একতাই জীবন , জীবন টাকে
নিজের জন্য রাখুন !

কতকাল দাঁড়িয়ে আছেন পেছনের সারিতে , আর কত কাল
কেটে যায় লাইন থেকে একটু এগোতে
আর কতরাত অনাহার , বিপন্ন বিস্ময় ভবিষ্যৎ নিয়ে !









এবং অর্জুন

সে ,

আজো দুর্দান্ত সঙ্গোপনে অপূর্বতার দিশায়
মোম আগুন আর সময় ;
নাগরিকত্ব প্রাপ্য হলে শরীরের ক্ষরণ কাল
আগাছা উপ্রে আমিও বলরাম হতে পারি
লাঙলের ফলাই
এক রত্তি বীজে ঘটিয়ে দিতে পারি
বৃক্ষের বিপ্লব ;

আমি ,

কাছাকাছি এসো না কাঙাল , ভুক বারুক ,
যখন সমস্ত শিরা উপশিরা শুধুই আমার রক্তের কথা বলে
তোমার শরীরে
দেখ
খুলে যাবে পৃথিবীতে আহারের থালা ;

এবং ,

তারপর
লুট হয়ে যাক হরিরলুটে প্রসাদের উপাচার ----

অসহয় ,

এখন ক্লান্তি ----
গভীর ঘুমে আচ্ছাদিত বিশ্বজয়ী সম্রাট ---
দ্রপদি'র মুখে ভাসে অর্জুনের ছায়া !









ছড়া

তার চেয়ে বরং স্বপ্ন ভাল বেসে
ঘুমিয়ে পরো শিশুর মত হেসে
মাথার পাশে গকুল বালক এসে
সব ব্যথা নিক নিজ আপন বুকে ।

তার চেয়ে বরং স্বপ্ন উঠুক জেগে
শীর্ণ চাষি লাঙ্গল কাঁধে ফিরুক ঘরে
স্ত্রী কাজের ক্লান্তি ভুলে
যাত্রা পালা দেখুক রাত্রি জেগে ।

তার চেয়ে বরং স্বপ্নে আসুক নদী
পানকৌড়ি মাছরাঙাদের ভীরে
ধীবর নৌকা ধরুক যত মাছ
উড়ুক যত গাংচিল আর সাদা বকের দল।

এর চেয়ে বরং স্বপ্নে আসুক দেশ
ক্ষেত খামার কলকারখানা জুড়ে
কৃষিজীবী শ্রমিক শ্রেণি মিলে
বিশ্ব ভ্রমণ করুক ঘুরে ঘুরে ।

সব ছেড়ে বরং বাস্তবে আসুক দিন
সব ছেড়ে কাজে যাই লেগে
রাম রহিম ভুবন মিলেমিশে
মিরা প্রেমে ভাসুক ছেলে বুড়ো ।







অন্ধকারের গল্প

যত আলোর উৎসের দিকে যায় - তত বেশী অন্ধকারে মিলিয়ে যায় !
সামনে ভাসছে দুপুর জুড়ে কাঁথায় সুর তুলছেন মা
হাত তো না মেশিন ,
আমি মায়ের কোলে মাথা রেখে একটু ঘুমোতে চাই ।
অজ্ঞানতা'র পরস্পরায় ঠোটের সঙ্গে ঠোট দেহের সঙ্গে
দেহ মিলছে হাজার বছর ---
নদীর শূন্যতায় উপকূলের নির্জনতায় নারকেল গাছের সারি
নির্জনে স্বপ্ন ভঙ্গ অনামি মুখে ,
কাউকে কোনদিন জানানো যায় না - কেন কোকিল গান থামিয়ে
বসন্ত বাতাসে লাঙ্গল তুলে নেয়নিই কাধে , সংস্কার
বঁধু সতী হতে পারে সাবিত্রী হয় গাঙ্গুরে ভাসাই ভেলা
কিন্তু লম্পট মহিমের মুখে কোন কালে থাপ্পড় চাপাই নিই ?
জানি না , আর কতকথা জানিনা জীবনে
কত নিস্তেজ মুখ দূর থেকে বহুদূরে থেকে গিয়ে বিলীন
হয়ে যায় মাটির সাথে ;
বুঝতে চাই আমার এই জন্ম এই জন্মভূমিতে কতকালের
পুরনো আমার মাতৃ ভূমি
কতকাল ধরে শ্যাওলা জীবন নদীর ঢেউ বেল গাছ
আমের মুকুল ঝরে ফাগুণের দুপুর ,
আর কত দেহ পোঁচে গেল
দেখে গেল আজীবন চোখ !
আমার এই জন্মভূমি -- আমার চোখের প্রাণ !
আমরা যারা জন্মের পরমপরায়
যারা ভালবাসায় অবহেলায় অন্ধত্বতায়
দেখলাম পৃথিবীর মুখ
এলাম আর জয় করে ফিরে গেলাম যারা সন্তান কে যখন
অবশিষ্ট সময়কে শাসন করতে রেখে গেলাম
তাদের মধ্যে কেউ কেউ গভীর দুঃখে ভোগে নি , সারারাত কাদেনি ,
আকাশের দিকে দুচোখ মেলে ?
বলেনি এই জন্ম পলকে গেল চলে ?
দেখেনি বীভৎস আমার রূপ ? জানি না , জানা হয়নি
আর কত নিরুচ্চারিত কথা ---
মনে পরে না আর কত হারানো মায়ের মুখ , গানের সুর ,
হারানো সে সব কবিতা ?
নেই কোন আগুনের গল্প পৃথিবী জুড়ে , নেই কোন অতিরিক্ত
প্রেমের ছড়াছড়ি ,

দেখেছি রাস্তার দুপাশে শব , কোন এক ভাগ্যবান শব বাহকের
কাঁধে পেল স্থান , আর বেশী কোন এক ভাগ্যবান
মুখাগ্নি পেল !
আমি তো শুধু একটু স্থিরতা চেয়েছিলাম ,
মায়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমোতে চেয়েছিলাম ,
কতকাল ঘুম নেই , কতরাত বিনিদ্রায়
উপোষী কাল প্যাঁচার ক্ষুধা , তবুও কতরাত
এই নশ্বর দেহ দলনে ধর্ষণে মন্দনে নখ আঘাতে ক্ষতবিক্ষত
কেপে উঠেছে নারীর সান্নিধ্যে ,
আমি তো তোমার কাছে ফিরতে চেয়েছি
আলোর উৎসের দিকে হাঁটতে চেয়েছি
ছুটতে চেয়েছি নদীর গতিময়তায় আমাদেরই জন্য
জীবনের জন্যও বটে !
আমার মৃত্যুর পর
সাতাশে মৃত্যুর পর
কিম্বা মৃত্যুর আগে
দেখেছিলাম আমার শব নিয়ে শেয়াল শকুনের দ্বন্দ্ব ,
মৃত্যুর আগেই কোন এক কাল মৃত্যু এসে টেনে নিয়ে গেল ভাগারে !

আমি চিলের ডানায় এক চিলতে রোদ্দুর হতে চেয়েছিলাম
দিতে চেয়েছিলাম বাঁচার সুস্থ স্বাধীনতা শালিখেরে ,
সন্তান হারানো মায়ের বুকে দুধ দিতে চেয়েছিলাম আমাদের জন্য
এক টুকরো আঁচে স্যাকা পাউরুটি দিতে শখ হয়েছিল তাদের ---
মৃত্যুর পর মেঘের আঙিনায় দাঁড়ালাম যখন , ধূসর
আকাশের নিচে মুখ লুকোনোর জায়গা পেলাম না ,
স্পষ্ট দেখতে পেলাম জন্মটা বৃথায় গেল চলে --
এই জীবন বৃথায় গেল চলে অবশেষে ।
আর দূরে অস্পষ্ট রেখায় এক ছায়া মূর্তি , মা , মা আমার
জন্মান্ধ মা রাত্রে কেরোসিন প্রদীপের সামনে বসে
সূচে সুতো গলানোর লড়াই লড়ছে
দেখছি; মায়ের অলক্ষ্যে ঘরে ঢুকে মায়ের কোলে মাথা রেখেছি

মা হাসছে --মা কাঁদছে
" তুই এলি ? এত দীর্ঘ বিচ্ছদের পর তবু তুই এলি ? "









আমার প্রেম

ক- ছটাক জমির জন্য সবুজ ত্যাগ করে রাস্তায় দাঁড়িয়েছিলাম যখন-
বস্তুর জন্য বাস্তু ত্যাগ , ধানের গোলা কে জঞ্জাল ভেবেছিল মন --
জন্ম দাত্রীর কান্না উপেক্ষা
পরিবার হীন পরিবারে জীবন যাপন ,
সেই ক্ষণের কোন এক অবকাশে তুমি এসে ছিলে ।
সেবারের সেই বন্যায় রেলের উপর হাজার ঘর কোটি মুখ
আর মাটির দেওয়ালের সাথে ধসে পরছিল মন ;
তিন দিনের উপোষী তোমায় দেখেছিলাম
প্রিয় বন্ধুর লাল কুঠিতে
আমারই জন্য তৈরি রেখেছিল হিসেবী বন্ধু , আমি পুরো
জানোয়ার বনে গেলাম সেদিন !

আমার সে প্রেম !
নীল মেঘের চুড়োয় দুপুর নামে , সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে সমুদ্র পারে
বাঁশ গাছের মাথায় সংসার সাজায় বন সালিখ
সবুজ ক্ষেতে আজ গভীর অসুখ ----
সেদিন কিন্তু তোমার চোখে কোন লজ্জা দেখিনি , রাগ নয় ,
তুমি দু'মুঠো খাদ্য চেয়েছিলে তোমাদেরই জন্য --আর
আমরা চেয়েছিলাম নরম মাংস , সেদিন আমরা সেজেছিলাম
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় নেচেছিল শহুরে দামী হোটেল
নাভি নিয়ে বিচারকের চুলচেরা বিশ্লেষণ
চোখ দিয়ে গণ ধর্ষণ ! সেদিন , সে-দি-ন
সব্বাই এক সঙ্গে অন্ধে পরিনত হয়েছিলাম
এক কাল ক্ষণে











নবীনকরণ

আমিও কি তবে উবে যাচ্ছি প্রখর তাপে ,
আয়নায় কার ছবি , ঐ অসম প্রেত বিন্দুতে দাড়িয়ে যে
ভৌতিক মুখায়ব ? শুকিয়ে গেলে বৃক্ষ মূলে জল ঢেলে
মজা নেই ; জীবনের সুতীব্র চিৎকারে বলবে না
স্নাতসিক্ত হয়ে উঠেছি এবার , তোরা থাম !
বিষ দৃশ্য পেছনের কোলাহল , মুকুটহীন রাজরানীর অঙ্গ সাজ
দীর্ঘশ্বাস ; অথৈ জল , ক্লান্ত নাবিকের ঘরে ফেরার স্বপ্নে
নেই একটাও চুম্বনের দৃশ্য , বলিষ্ঠ হতে শিখে যায় যারা
তারাও বলিষ্ঠ নয় একাকীত্বে !

আমি উবে যাচ্ছি বলে চমৎকার সমৃদ্ধ হয়ে উঠছে
সকলের চেতনার সাম্রাজ্য , শোকও ভুলছে বিগত যৌবনের
মৌ বন পলাশের স্মৃতি আর নুড়ি রাস্তাঘাট ; বিগত
হতে গেলে একটা মুহূর্তের সময়ের নবীকরণই অনেকখানি ---

এবার উবে গিয়ে মোম হয়ে মিশে যাবো সমস্ত আগুনে ----
লালসায় আস্ত পৃথিবী ;
চুম্বনের কষে লেগে থাকুক নবীনত্বের প্রস্তাব











ঈশ্বর কে আক্রে ধরতে গিয়ে মনে পরে
আজো দুই হাতই বাঁধার তোমার হাতে ;
হয়
আমাকে গ্রহন করো
না হয় ফিরিয়ে দাও আমায় উড়বার স্বাধীনতা









চাষ

অনেক লোভনীয় ঢেউ পিছু ফেলে আরো দূরে ডিমের কুসুমের মতো
আমাদের গ্রাম , গ্রামের ছবি দেখলেই আয়নায় , আমার অসুক করে ;
চর্চিত হয়ে গেলে ভূমি বিদ্যা খাতায় কলমে বড়বড় মানুষের শীততাপ
নিয়ন্ত্রিত ঘরে শোকসভা মুছে যায় ক্ষেতের ---
আমিও দেখিনা নিটোল রোদে বাবা মাথালি খুলছেন দাওয়ায়
আর শরীরের সেই ধান ধান গন্ধ উড়ছে বাতাসে
এক ঘটি জলের সাথে শীতল হচ্ছে তীব্র বৈশাখ ! এখন যখন

প্রতি টুকরো দীর্ঘশ্বাসে নাগরিক চাঁদ ওঠে আমার ছাদের উপর
শুধুই পূর্বজীবন মন্থন ; পান করে নিয়ে পুরনো পল্লীমঙ্গলের সুর
নীলকণ্ঠ হয়ে যায় আত্মজ আত্মা ,
নারী জন্মে দ্বিরাগমনের ক্ষণে পিতৃ মুখে বিষাদ পাখি
আমিও মীরজাফর বটে সম্পর্কের !

নাগরিকের সুখ এসে গেলে জন্মভূমি কর্ণের উচ্চতায় ছায়া ভাঙ্গে
বেরে যায় গম ক্ষেতে কাকতাড়ুয়ার ভৌতিক মুণ্ডর আগমন ;
আমিও ছেলের স্কল ব্যাগে ভরে দি ভূমিরূপের ম্যাপ -----
আর ফিরবো না হাঁসের প্যাঁক প্যাঁক শব্দে

বিশ সাল বাদ ----
ছেলে আই এ এস , কৃষি উন্নয়নের মস্ত আধিকারিক ----
আমার আটাত্তর বছরের বাবা শিখছেন ওর কাছে বোর ধান পোতার নিয়ম !









সামগ্রিক ভাবে চাহিদার এই মাস্তুলে রেখে দিলাম এক নারী , গগনচুম্বী আশা নিয়ে বাস্তবিক নাউ ভাসিয়ে কল্পনায় , তাতে মধু ঢেলে দিলাম এক পিপে , এবার বল কেমন লাগলো সমুদ্র সফর ? আমি বললাম বাহ ! নারীকে বোধহয় এভাবেই খুঁজে নেই পুরুষ ( যারা পুরুষ সিংহ ) , অবাক হয়ে ভাবী এতেই বোধহয় মীনাক্ষীর পূর্ণতাপ্রাপ্তি ঘটবে এবার প্রেমে ---- লেকিন হেঁশেল প্রত্যাশা যেন এক মায়াবী কল্পলোকের ক্ষলন ঘটিয়ে দিলেন কবি , প্রথমে হেঁশেল ছাড়ার সেই লোভ এক অনাদি রাজ্যে ভাসার আমন্ত্রণ যেন সেই তো নারীর চিরন্তন ভবিতব্যে এসে আটকে গেল ------








prem

এসো প্রেম শুয়ে পরি
সম্পূর্ণ নগ্ন শরীর নিয়ে গভীর জড়িয়ে শুয়ে
থাকি মৃত্যু অবধি ;
মনে হয় যদি কতকাল হয়নি কো ঘুম
নরম শিমূল বালিশে পরেনি কো মাথা
মৃত্যুতে শ্রেষ্ঠ প্রথম এবং প্রধান মনে করে
আত্মা কে অর্ধমৃত জীবিত রাখার চেয়ে
আত্মা খুন করে
দু'জনে বিলম্বিত মিলবো সঙ্গমে !
আর জাগবো না কোনদিন জীবনের উচ্চারণে
এসো গভীর ঘুমিয়ে থাকি
পাট ক্ষেতে কীটনাশকে মৃত শালিখের মত
অনন্তকাল !
নীরবতার চেয়ে কোন সুন্দর কথা নেই
মৃত্যু ছাড়া নেই জন্মের কল্পনা !









সায়ন্তন

চাঁদ ডুবে গেলে পর চরাচর ভেসে যায় গভীর অন্ধকারে
চুপি চুপি স্বপ্ন আসে - এসে ভীর করে বিপন্ন ভবিষ্যৎ ।
সব স্বপ্ন মনে হয় , আমাকে ক্লান্ত করে দেয় এই অস্থির
সময় , আমি কাউকে কিছু দিতে পেরেছি কিনা - রেখে
যেতে পেরেছি কিনা অমুল্য রতন , সোনা মণিমুক্তা
ব্যাঙ্ক লকার
আসলে এসব আগামী প্রজন্মের গল্পের বস্তু ; স্ত্রী পুত্র
ক কাঠা ক ছটাকের উপর দাড়িয়ে আছে বাড়ি এই সবই
তো রেখে যায় সক্কলে ,
আমার তবুও এই সময়টাকেই অতীত মনে হয় -
এক নিমেশে জাতিস্মরে পরিনত হই
মনে হয় আর একটা আগের জন্মের এই জীবন
একই রকম ! অথচ
অপার বিশ্বাসে জেগে থাকে যারা
যেসব দেশীয় জনজাতী রমণী , রাত গভীর হলে
হাড়িয়া মুহুয়া মাতালে
মাদলের শব্দে কোমর দুলিয়ে নাচে
পুরুষ কে ডাকে প্রথম রিপুর ঈশারায় ,
পঞ্চভূতে বিলীনের একটু আগের নাটকের চরিত্র এরা সব
এক অন্ধকার নিশিতে সত্যি কারের মানব মানবী বনে যায় । বল
তবে এসব কিসের জন্য ?
বল সমুদ্র , ঝর্ণার স্বচ্ছতায় এসব কার জন্য ?
অনামি চাঁদ-----
তোমার ডাকের প্রতীক্ষায়
একা ভীষণ একা নিশিতে আলপথ ধরে
দাঁড়িয়েছি কান্তারে ,
জাগতে রহ জাগতে রহ নেপালি চৌকিদারের মত
নিশি এসে এক সুলক্ষণে জানিয়ে গেল ,
যেহেতু সমগ্র পথ হেটে এসেছি সেহেতু দেহের সমগ্র বিন্দু দিয়ে
দরদর ঘাম ঝরছে
বা পাশের বুক সদ্যজাত বাছুরের মত লাফাচ্ছে
দু'পাশের ধান ক্ষেত থেকে কেমন মন খারাপ করা বাউল সুর
বাতাসে মিলিয়ে গেল আর একবার --
আর একবার পাশের সর্ষে ক্ষেত মানুষের উপস্থিতিতে
লজ্জা পেয়ে সম্ভোগ ছেড়ে লাল মুখে বেরিয়ে এলো ----

সায়ন্তন , এখন
আলপথে শুয়ে উপলব্ধি করছি তোমার আলো কই ?
জীবনের ভগ্নাংশ বিন্দুতে দাঁড়িয়ে সবুজে মাথা রেখে
(আহ্লাদী ছেলের মত মায়ের বুকে মুখ লুকিয়ে )
যেন নতুন করে ফিরে এলো সময় ---
এই কংক্রিট দেহের আনাচেকানাচে বিশ্বাস করো
সায়ন্তন নতুন করে আর একবার মানুষ হতে
চাইলাম আমি !














































































No comments:

Post a Comment