Thursday, 21 June 2012

কিছুমিছু ২



এমন হিম রাতে

উত্তাপ বল রোমাঞ্চ বল সাপ খুঁজে নেয় পৌষে
হিম শীতে , আহাঃ , ধান গাছের ঘুম ভেঙ্গে গেলে
খড়খড়ে আলপথে সে , জানে সে মানুষের উত্তাপ
কোন দিকে, কোনদিকে উত্তাপের রহস্যমূল ; তবুও
ভুল করে সে আদিম বিদ্যা জানতো বলে , ও জানে
না মানুষ বহুদূর সরে গেছে মাঠ থেকে , মানুষ - মানুষ
থেকে ! তবুও রোজ হিম রাতে সাপ , যে দিকে মুগ্ধতা ছিলো
সেদিকেই এগিয়ে যায় রক্ত উষ্ণতা ভালোবেসে ।

একসময় সাপ এসে এসে এদিকে লকলকে ধারলো জিহ্বা
আমার শরীরের উপর রেখে মেপে নিতো উষ্ণতা ;
আমিও বিমসিত ভয়ে রাগে অভিমানে রোমাঞ্চে ,
তীক্ষ্ণ দাঁতে আমি ক্ষত-বিক্ষত রক্ত ঝরিয়ে বিষ ঢেলে ফিরে গেলে
আমার মরণ হতো রোজরাতে ; ঘুম থেকে উঠে আমার কোন
ক্ষত দেখতাম না -- সব শুঁকিয়ে যেত

এখনও প্রতিটি হিমে সাপ উষ্ণতা খোঁজে হিম ভেঙ্গে --
শুধুই আমিই সরে গেছি মাঠ বসত ঘর সাপের কাছ থেকে 







মেয়েটা হেটে যাচ্ছে সূর্য উদ্ভাসিত কোণে
একা , একা , তার এক একটা পোশাক খুলে পড়ছে
সেও ঝলসে উঠছে ততবেশি ;

এই দৃশ্য দেখে বই পোকা এক ছেলে কাটাকুটি খাতা থেকে
মুখ তুলে নিলেন ;
ও সূর্যের এগিয়ে যেতে যেতে মিলিয়ে গেল

একদিন মেয়েটা আভরণহীন , দৃপ্তিতে তৃপ্তিতে ,

পাগলা গাদরে একটা মেম্বার বাড়ে --
শোনা যাই সেই ছেলেটি'র খোঁজ পাওয়া যাইনি এখনও --
লোকমুখে কথিত মেয়েটি ছেলেটিকে ভাল বাসতো
ছেলেটিও ভালোবাসতো বিয়ের আগে









চাঁপা ফুলের গন্ধ

আরো কিছু ফুল দাও সামাধিতে ,
যদি পবিত্র জল থাকে কিছু নিভৃতে অন্তঃলীনে
তবে ঢেলে দিও ; কাগজে লিখে যেওনা কোন
মান-অভিমান । আমিও সেবার স্থির
হাতের পাঞ্জাতে নেই সেই ক্ষিপ্ততা -যা তোমাকে
বশীকরণ করেছিল রোজ রাতে ,
সে সময় আমার চেতনার সমূহ অন্তঃমূলে
দাম্ভিক প্রেমের ক্ষলন ঈশ্বর বুকে রেখে ঈশর বধের
ক্রুসেড ; এসো , এসো আজ প্রেম
বিলম্বিত তবুও অদ্ভুত আত্মসংযমে আমি রবো বসে
তোমার ঠোঁটের জলীয় উপত্যকায় !
আমার ঘোলা জলে অহরহ সুযোগ সন্ধানী সেই
শরীরের পঙ্কিল লোভ এসে
ঘেঁটে দিয়ে গেছে করবী বাগান ; আমিও মদের মৌতাতে
বাসার সাঁজায় , চুলের গন্ধে বিমসিত
আর শারীরিক মান্যতায় বারংবার ভুলে যাই
প্রিয়তমা , প্রিয়তমা মুখ !

আর ভয় নেই কোন জন্মে , ভয় নেই প্রেমে মরণে
সৃষ্টির দাবানলে ; মরে-টোরে ভুত হয়ে গ্যালে
অশরীরী চেতনা ---
যা জন্মে বুঝিনি , মৃত্যুতে বুঝিনি , তা এই নভশ্চর
কিম্বা উভচর জীব হ'য়ে ফেতৎ চেয়েছি সেই অধিকার
একবার জল ফেলে দ্যাখো , দ্যাখো ,
হাজার প্রতিবন্ধির মধ্যেও হতে পারি ফিনিক্স ---
তুমি তো জানো - তোমার ছায়াতেই আমার সমাধি !









অবরোধ

আজই হয়তো সেই সংবাদ এসে যাবে
রক্তনদী থেকে উঠে গিয়ে মাছি ঠিক খুঁজে পাবে
একটা দহন দুপুর আর কাঁঠাল ভাতের থালা ;
বন্ধুকের নল এত সুন্দর বাঁশি হয় কে জানতো ?
সিরিয়ার বন্দুক নল থেকে উফঃ কি সুর বেরুচ্ছে ,
চৌরাশিয়া সাহেব ক্লান্ত ; সমস্ত সীমান্তেই ডাক তার
বিচারকের , সুসংবাদ এসেই যাবে বোধহয় --
লিকলিকে পেট মোটা স্কুলে দৌড়াচ্ছে এই প্রথম
মাটির হাড়ি থেকে আঃ ভাতের গন্ধ বেরুচ্ছে -
সেই শীর্ণকায়া বঁধু আজ জীবনে প্রথম সূর্য দেখে
আহ্লাদীর পাতার মত হেসে উঠছেন খিলখিলিয়ে !

আজই প্রথম পৃথিবীর সমস্ত রাষ্ট্র নেতা আর পররাষ্ট্র
মন্ত্রি এক সাথে পুংতি ভোজন -- পশ্চিমের নেতা
পূর্বের নেতার হাত চাটছেন ;

সেই সংবাদ এসেই যাবে বোধহয় --
কাঁটাতারের সীমান্ত প্রাচীর উপড়ানোর , রঙ্গিন সেনানী'রা
লং মার্চ করছেন --
এবার ঈশ্বরভূমি অবরোধ - দাবীতে রেখেছেন
দেশ নাও আমাদের বদলে হৃদয়ে একটা করে দেশ এঁকে দাও







শোভাবর্ধক

সব শোভাবর্ধক বস্তুতে সূর্যালোক ক্ষণকাল স্থির !
এখানে জন্ম , এই মৃত্তিকায় আদ্র সনাতনী জমিন ,
শোন প্রাজ্ঞ , স্থির হ'য়ে শোন , কে ছড়ায় এখানে
বীজ ! অঙ্কুরোদ্গম শস্য দানায় সেই আবাদ জনশ্রুত
প্রতিটি নিঃশ্বাসের চেয়েও ঢের জন্ম দেয় ;
শোন , শোন প্রাজ্ঞ , অসুস্থ গাছের থেকেও অনেক
বেশী অসুস্থ মাটি হাওয়া জল এবং অদ্বিতীয় তাদের
সন্তান ; এইসব স্বচ্ছ মৃত্যুময় হিমে গ্রামকে গ্রামময়
ক্লিষ্ট মৃত্যু সমাচার কাদের অধীনে নিয়ন্ত্রিত !

বস্তুত তাঁরার থেকেও ভয়ানক সত্য নিয়ে বুকে বুকে
সঞ্চারিত চেতনায় পক্ষীরাজ ঘোড়া ঠাকুমা আর দলছুট
সেই সব বালক ; হাজার হাজার ঘুম পিলে
সকলে মনে মনে জানি সব তবুও ঘুম ভাঙাই না
মৃত্তিকার ফসলের বৃক্ষমূলের !
শোন , শোন প্রাজ্ঞ , তবুও এখনো হাসি পাই - জ্বর মুখে
পৃথিবী খেয়ে দেখি বিস্বাদ ;
তুমিও জানো -- জ্বর সারাই না ----
পৃথিবীর কাছে গেলে মানুষ মানুষ থাকে না !









পরপুরুষ

মা বলেছিলেন পরপুরুষের নোংরা দৃষ্টি
দেখলেই পথ সরে দাঁড়াতে , আর বলেছিলেন
পরপুরুষ আর হন্য কুকুর সমগোত্রীয় ,
দু'জনারই শুধু নাকি কামড় পিপাসা !

এর পর থেকে আমি আমার পাগল প্রেমিক কেও
কাছে ঘেঁষতে দিই না , প্রেমিক হলেও পরপুরুষ তো !
ও ঘ্যান ঘ্যান করে , বুঝি অভাব , তবুও
মায়ের মুখ স্মরণ করি
আমাকে দেবী থাকতে গেলে নাকি পরপুরুষ থেকে
শতহাত দূরে !

নিজের লোক'রা বোধহয় বোধহয় পরপুরুষ হয় না ;
নিখিল কাকুর সঙ্গে( বাবার মাসতুতো ভাই) মা বিয়ে
বাড়ি সিনেমায় জান ,
মাঝে মাঝে দুপুরে এসে খেয়ে জান , আমাকে চকলেট
দেন আর মায়ের ঘরে সমাজতত্বের চর্চা করে ফিরে জান
বাবা অফিস থেকে ফেরার আগে !

আমিও মায়ের কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করি --
পিসির ছেলে মামার ছেলে পরপুরুষ নয় ভেবে গল্প করি
ওরা গৃহস্ত চর্চা করতে গেলে আমি ভাবি
এরা পরপুরুষ নয় ? মা বলেছেন !









যদি ফিরে না আসি

যদি আর নাই আসি , মায়ের পায়ে লাগা ফুল হয়ে
এক অখ্যাত নর্দমার কীটে মিশে গঙ্গার অভিপ্রায়ে
প'চে গ'লে গন্ধ ছড়ায় ; অনেক ভাদুরে আকাশে
বৃষ্টির মত অভাব বুঝি , অনেক শৃগালের মত
মাংসের লালা লালসায় অভাব বুঝি ; কি জানি, হয়তো
মেঘ জমে ওঠে অনেক বুভুক্ষায় থেকে , আর আশ্চর্য সেই
সপ্তসিমণ্ডল বিগলিত হ'য়ে ঝরে পরে প্রেম আকাশে !
মাছে'র আঁশতে গন্ধ থেকেও আরো গভীর গন্ধ আছে শরীরের
অস্ফুট কথা'র থেকেও গোপন ভাবে কথা বলা যায় ,
সিগারেট আমেজে হয়তো পাইনা তোমাকে কিম্বা
নিম্নমুখী ব্যথার অনুভব নেই আমার প্রথমবারের মায়ের
মত বা গৃহস্ত কুকুরের মত মালিক খুঁজিনি গন্ধ শুঁকে --
শুক্ল তিথিতে দেখি সমস্ত অনুকম্পা এক বৈদহী রূপ নিয়ে
অব্যক্ত কথা'র গ্রন্থনে মূর্তি গড়েছে তোমাকে সামনে
রেখে ; এভাবে ফেরা যাই না জানি ----
সাতটা সাগর ধরে অহরহ ঘুরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত --
পাতায় নক্ষত্র জ্বলে সেই ইশারায় !











একজন প্রাচীন শিক্ষক কিছু ছাত্র পড়াচ্ছেন --
কিছু ছাত্র ডাক্তার হবেন কিছু উকিল
কিছু ভুঁইফোঁড় কিছু ধান্দাবাজ কিছু সেবক ,
কিছু ছাত্র বারবার আসবেন কিছু চাষ করবেন

একদিন
আবার সে শিক্ষক ছাত্র পড়াবেন --
একদিন আবার আসবেন এরা

একদিন শিক্ষক আর শিক্ষকতা করেন না --
সবাইকে ডাক্তার উকিল হতে দেখেছেন --
একটাকেও মানুষ হতে দেখেননি











মুখের অন্তরালে

তারপর শুয়ে পরলাম গৃহস্ত বিছানায়
মোম আগুনের মাঝে ,দরজা বন্দ পেয়ে
ফিরে গেল যারা ,সে উদাসী রাত থেকে
শুদ্ধাচার বুদ্বুদ চেতনা মহাবিশ্বের সমস্ত
রহস্য ফাঁদ ,আর নিযুত অযুত ক্ষত নিয়ে
শরীরের অজস্র ভূমিকায় লক্ষাধিক ভূমিমূল,
নাভিমুখের উত্তাপ ধর্মাধর্মজ্ঞান , মস্তকের
শীর্ষ তলে সাম্রাজ্য পায়ের অবতলে ঈশ্বর !
শূন্য থেকে শূন্যতার দিকে নিরাকার বিশ্বাস
মধ্যরাতের স্বপ্নে অনামিকার দুর্মূল্য আংটি
রতি চলিত স্রোতে আদিম তীরন্দাজ, বরকন্দাজ
সর্বাধিক প্রতিষ্ঠা পেলে বুকে , কাছে-দূরে
কালো পৃথিবী !
মধ্য রাত ধরে যারা জীবন এঁকে যান , শরীর
সংস্থাপন শুদ্ধ হাতে , তৈরি হই অবয়ব ,
সকালের রোদে শুধুই জন্ম আর জন্ম
এতো জন্ম এত মুখ এত রঙ্গিন ছবি-প্রতিচ্ছবি
বেশ , বল তুমি , তবু মুখ ছাড়া কেন
মুখোশের ছড়াছড়ি !









চার বাহকের মহাকাব্য

একবার তুমি ভাল বাসতে চেষ্টা করো বলে
চার'জন বাহকের কাঁধে উঠে পরি নিরুত্তাপে ,
অনেক দূর চলেছি আমি , এখনও অনেক পথ যেতে হবে
খাদানে পাথর ভাঙ্গা চোখ গুলোকে বলতেই হবে
দ্যাখ , আমিও এবার শিখে নিয়েছে নির্বাণ প্রাপ্তির ফন্দী-ফিকির !
চতুর্বর্ণে দশদিকে সরল রেখায় উঠে মানুষের মাথা
তবুও ফল প্রাপ্তির সময় এলেই শুধু ঝুকে পরে মাথা ,
এই বাহকের কাঁধের উপর থেকে উপলব্ধি করছি
মানুষ বড়ই অসহয় জীব সে জন্মেই হোক অথবা পতনে --
কাদা হাসা ক্ষুধাতেও কাউকে বলতে হয়
দ্যাখ আমি আছি -- নইলে কেই বা মনে রাখে
জল নক্ষত্র মানুষের অভিমান !

চলেছি আর দূরে দূরে দেখছি বরজে বরজে মাটি কাটছে
যারা তারা সুরেলা কণ্ঠে গান গাইছে ,
যারা অন্য মুখে স্বাদ দিয়ে যাই ফসলে ফসলে বীজে বীজে
আর হেমন্তের ফাকা মাঠের শূন্যতায় ঘুমিয়ে গেলে
চার বাহক হাজিরা খাতাই সই করে তুলে নিলে কাঁধে
স্বপ্নরাও পরিযায়ী পাখি হয়ে খুঁজে নেই অন্য শরীর --
সব অভিমান মৃতসঞ্জীবনী খোঁজ আদ্র মনের নেশ একদিন
সব নিদিষ্ট গন্তব্যমুখী ---
এবং মুখীয়ে আছে শ্মশানকলা , নিরুদ্বেগেই সব ইতিহাস ,
ইতিহাসের পুনুরুত্থান !











প্রাচীন পন্থী

আমার ধমনী'তে প্রচলিত সেই রক্ত প্রবাহ ,
মজ্জাগত সব বিকৃত চেতনার অভিশাপ খেলা
করে রক্তের ভেতর অনন্তবার ; নিজেকে নিজের
মত দেখতে পারে কে ? কে পারে রক্তের স্বাদ
জানাতে প্রকাশ্য জনসভায় ? কে পারে অন্তরে
নিহিত গূঢ় রহস্য ভেঙ্গে বলতে- নিষ্কাম ভালোবাসি
আমি - তোমায় মেয়ে ?
আরো আমি-তুমি খেলা করি ইজেরের অন্তরালে ,
যেন দশ লক্ষ বছরের প্রাচীন প্রজাতি আজো পরাধীন
স্বেচ্ছা পরাধীন পরাজিত নিজেই নিজের কাছে
অব্যক্ত স্বমূল চেতনা!
দ্যাখো তুমি , রহস্যের অন্ধকারে নয় শ্মশানভূমি ,
আগুনের অনিয়ন্ত্রিত অভিমুখে তোমার জীবন ততোখানি
দাবী রাখে যতখানি বিদগ্ধ পতঙ্গ ; অথচ কুলীন বটে তুমি
সম্মুখ জীবনে ;
একবার স্বাধীন শুধু অন্তরাত্মা আগুনের অনুভবে মনে মনে --
কথা আসে মনে তবু সেবার কথা ফোটে না !










































No comments:

Post a Comment