Tuesday 11 September 2012



ধরো বৃষ্টি হবে , রাজার আসন ফেলে 
ছুঁয়ে যাবে বৃষ্টি অগুন্তি গাঁ হ্যাচাকের আলোয় 
কীর্তনের আসর ;
কে যেন বলেছিলেন এবার বৃষ্টি হবে না তেমন , যেমন
গত বছর ভেসেছিল চণ্ডীমণ্ডপময় ছেঁড়া পাণ্ডুলিপি 
প্রেমিক- পাগলদের বসার ঘাট । 

ধরো কচ্ছপখোল গ্রাম বৃষ্টিতে ছয়লাপ ,

দিস্তা দিস্তা খাতায় কবিতার নবজাগরণ ,
উত্তরের আকাশ সন্ধানী দৃষ্টিতে পাতার স্নানে দেখছে
আগামী ফসলের আমন্ত্রণ ;
নৌকাঘাটায় মাঝিতে-মল্লায়
বাউলে-ফাউলে রমণ সঙ্গীত ,
পুনর্জন্মের সন্ধানে বীজের গুপ্ত শক্তি ভেঙ্গে মাথা তুলবার
দৃঢ় প্রয়াসের অনুভব ধরে রেখে কৃষক
বলেছেন , "বৃষ্টি আয়" ।

অবশেষে সত্যি বৃষ্টি নেমে আসে আহ্লাদী চোখের জলের মত ,
রাজার আসন ভিজতে না ভিজে
সারা দেশ জলের নিচে ;
রাজাও অনেকবার ভেবে দেখেছেন
" মেঘনাথ সাহা " বৃষ্টি চাইতো কি চাইতো না জানা যেত
যদি একবার !








২৩









মেয়েরা চোখে নোংরা হলে আঁশটে গন্ধ ছড়াই !
আমরাও চোর পালানোর পড় যেমন শোরগোল তুলি
তদ্রূপ পাড়া গেল , পাড়া গেল চিৎকারে
ঘুমন্ত শিশুকেও বুঝিয়ে দিই এই শহর , এই গাঁ-গঞ্জ আমাদের
চিৎকার সম্বলে বেঁচে আছে , তুমিও শিখে নাও

আমি বিশ্বাস করি মেয়েটা বেশ্যা । প্রতিটি নাগরিক রাতে
তার ঠোঁটের কষে নামে গাঢ় নিষিদ্ধতা ,
বিকৃত অঙ্গ চালনায় সুখী পুরুষ এবার মোলায়ম সারসের
পালক খসা মুগ্ধতায় মুখ ধুয়ে ফেলে
শরীরের দাগ মুছে ফেলে থার্টি বাসের পা'দানিতে ফেলে আসে
মোহময়ী আগুন অঞ্চলের স্মৃতি ।

অথচ , মেয়েটিকে আমি বেশ্যা বলেছি , আমিই বেশ্যা বলেছি ।
অথচ, মেয়েটিই শুধু গন্ধ ছড়াই
অথচ , মেয়েটিই শুধু বক্র দৃষ্টির অন্তরালে ,

অথচ , ভোগী নয় , ভোগ্যরা গন্ধ ছড়াই সমাজে
অথচ , অশুদ্ধ যৌনাচারে ভোগীরাই বিচারক ।

অথচ , তুমি শোরগোল তোল ।
জানি , জানি জানি এক বধির থেকে অন্য বধিরকে শোনানোর জন্য
তোমার আওয়াজ ,
অথচ , মেয়েটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিরুচ্চারে কত কথা বলে যায় আগামীর
মায়ের কানে কানে  




















৯৮







উপর ঠোঁটের বা'পাশে উপরে যেখানে কালো তিল
ঠিক ওখানেই মায়েরও তিল ছিল ;
মাও ঠিক আমার মত উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ
হেসে উঠলে ডান গালে টোল খেত
আমার স্বামীর মত বাবাও মায়ের কপালে চুম্বন করে অফিস যেত ।

আমার ও মায়ের মধ্যে বাইশটা বসন্তের সেতু ছিল ,
আলতা পায়ে , সিঁথিতে বড় সিঁদুরের টিপ খোঁপায় বাঁধা
নানা রংবেরঙ্গের ফিতে , আঁচলটা হ্যাঁচকাটানে খানিক
মাথায় তুলে বিকালে পাড়ায় বেরোলে ---
লোকে বলতেন " চৌধুরী বাড়ির রাণী বেড়িয়েছেন পথে "

এখন , ঘন ঘন আমি পথ ভাঙি , মায়ের আলতা ফিতে
মাথার কাপড় অযত্নে ম্লান ,
আমিও দত্ত বাড়ির বড় বঁধু পরিচয়ে পরিচিত হয়েছি --
তবুও দেখি
যে লোকগুলো একদিন মাকে রাণী বানিয়েছিলেন
তারাই আজ টানছে আমার আঁচল




৯৮





কোটি মানুষের সাথে বাবংবার সেতুবন্ধন
লোকায়ত জীবনের প্রয়োগশালায় ;
ভুল হয় , ভুল হয়ে যায় চরম পিপাসিত অধ্যায়
যে হাত লেখে --
কি জানি , এখন দেখি সে খুঁজছে ভাতের থালা ।

হাজারও গলার সাথে গলাগলি হাত ধরাধারি শেষে
এখনও অচেনা লাগে
গৃহস্ত জীবের বেদনার রঙ ;
বিমূঢ় প্রত্যয়ে চেনাজানা স্বরলিপি গান হতে চাই
প্রকৃতি প্রস্তাবে রাখে সুর ; আহা ,
সমস্তই হাস্যস্পদ
প্রণয়ে আদি-দিগন্ত হেটে হেটে ক্লান্ত পথিক ;

চিরায়ত নির্মাণে পূর্বসূরি থেকে সংক্রমনিত অবক্ষয়ে
বিস্ময়ে বিস্মিত কাঁপা হাতে
কবিতা লেখার রাতে জেগে থাকে অভুক্ত যন্ত্রণা !




৬৭





সহজ-সরল বাসের হাতল ধরলাম ,
পা'দানিতে পা রাখতে না রাখতে
পৃথিবী ঘুরে গেল ;
বাসনে বাসনে কলতলা যুবতী হোল ।

বেশ সরলসিধা বাসে আমার পাশের হাত'টি ,
স্বাভাবিকের চেয়েও ঢের স্বাভাবিক দৃষ্টি ,
ঝুঁকে পড়ে বাস জানালায় পৃথিবী সন্ধানী -
শরণাগত মূর্তমান প্রতীক !

সেদিন খবরে ছবি দেখে চমকে উঠলাম !
লোকটি নাকি সাতবার রেপধারি
দৈবাৎ সাক্ষাতে খুনি আসে , আসে মাতৃহন্তক
কে নামে , কে ওঠে বাসে
এ পাড়ায় শারদীয়া দুর্গৎসব ।

বুঝেছি এসবই সহজতর ,
আর অজান্তেই সব হন্তক ভবিতব্য নিয়ে চোখের
দৃষ্টি প্রদান , এসবই একান্ত ব্যক্তিগত অনিচ্ছাধীন অত্যাচার
খোলা চোখে কানামাছির দিনকাল ।



৭৮



ঈশ্বর ছদ্মবেশী , সমস্ত অধ্যায় জানেন নৌকার খোল
সেঁউতির বোঝাপড়া এবং জল-বৈঠার সব সন্ধি প্রস্তাব ।
নেপথ্যে যত অন্ধকার হোক , জরায়ু প্রদাহের মাঝে শিশু হাসি ,
বিকৃত চিন্তনে পিতৃব্য ব্যাধি আর সমগ্র অসুস্থতায়
মাঝে সময়ের দংশন কীটের হৃদয় বিদারক জ্বালায়
ঈশ্বরও পন্থাবিহীন জগন্নাথ ।

অর্থাৎ অখিলে সকলেই ব্যাধিগ্রস্থ গোলকধাঁধাঁয়
পর্যায়ক্রমে সত্য- অসত্যের ক্রমিক সংখ্যাধিক্যর পরকাষ্ঠা ,
ঈশ্বর সংবিধানের ফাঁকে অজস্র ফন্দিফিকির আর
অনিদিষ্ট লোভনীয় ঢেউ ভাসতে ভাসতে
পরম্পরার বনেদী ঐতিহ্য ;
ঈশ্বর নিজেই বোঝেন এই অস্তিত্ব সংকট ,
উড়ন্ত শিমূল তূলাও জানে তার ভবিতব্য , নিরুপায় !

ঈশ্বরও ঠিক ঠিক ততোখানি আমার মতই সুযোগ সন্ধানী
যতখানিতে আমিও পিতা হয়ে যায় গ্রহদোষে !




৫৬




পরম্পরা থেকেই আমাদের আঁধার ঘর ,
আমাদের দেহতত্ত্ব , যার প্রথমভাগে সন্ধানী দৃষ্টি
দ্বিতীয় ভাগে রাধিকার বিরহ-ব্যথা ।

সমব্যথী যে চিরতরে , সে চেতনা বিলোপে
নীলে মিশে নীলকান্ত ;
তার ঈশারাতে তারা খসে গোলাপের বনে , বুঝি
সেখানেই ভালোবাসা দৃঢ় হয় গন্ধে গন্ধে ,
রাতের গদ্যে বুঝি সেই গন্ধে বিহমিত খোঁপার বেল ফুল লুটাই বিছানায় ।

পরম্পরা শকুন হই , হই দেবদূত ,
শরীরের অণুতে ঋণাত্মক চেতনা বিগলিত হয়ে গেলে
দেহতত্ত্ব হাঁসের মুখের মত ক্ষুধার্থ , আকাশে দৃষ্টি ,
প্যাঁক প্যাঁক জানিয়ে দেওয়া আছি ,

দেহতত্বের শুরু আগুন মালসায় , শেষ কলসি জলে ।


৬৫




এমনকি বিভ্রম দেখলাম অপেক্ষার তরঙ্গে
নিমেষে ভুয়োদর্শী জাতিস্মর
নীল মিশে গিয়ে নীলে পড়ে আছে খোলা দাওয়া
গোল্লাছুট মাঠ , অসুস্থতার রঙ মেখে নিয়ে শরীর
সাতটা রঙ সব মিথ্যা , মিথ্যা অজুহাত ।

অপেক্ষারা বসে থাকে অপেক্ষায়
অকাতর মেশে বাতাসে পুনর্বার গন্ধক সন্ধ্যা
অপঘাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই
যাপনের কুঠির
এই শহর মৃত্যু লেখে , মুছে দেয় আঘাতের সব দাগ ?

যদি , অচেতন কিম্বা ভুলে থাকা যেত
অথবা শামুকের খোলস অভ্যন্তরে অনুভূতিহীন জলহাওয়া ভুলে
দুদণ্ড নির্বিষ অস্তিত্বে ,
বুঝি সখ্যতা ছিল এখানে মানুষে মানুষে ?

এখন তবে শিক্ষানবিশ পাঠে মনোনিবেশ ,
বিরামহীন মুহূর্ত গুলো দু'হাতে ছড়িয়ে শবাগার পাঠে
থাকি ব্যাস্ত , তবে কি পুনরায় আগামীর জন্মে
ভ্রান্ত প্রলাপে জাতক কাহিনী ?




৭৬




বাঁধের বিপদসীমা ভাঙছে জল , রাতে- দিনে ,
পায়ের নিচে মাটি সরছে ;
একটা মাটির দেওয়াল থেকে অন্য একটি
দেওয়াল ঝুপ করে খসে পড়া শব্দ ,
নীম গাছে ঝোলানো দোলনা কোথায় রাখবে
ভাবতে ভাবতে
সূর্য সরে গেল পশ্চিমে মিঠা জলে ।

এখন শুধুই মাটির ভাঙাগড়া আলো অন্ধকারে ,
প্রকাণ্ড গাব গাছে মগডালে তির্যক শকুন
গাঢ় অভিমানে ,
কোথাও দৃশ্যর অভ্যন্তরে গোপনীয় খয়রাত
দান সামগ্রী লোলুপ দৃষ্টিতে জল মাপছে ,
আড়াল - আবডালহীন স্নানাগার খুলছে
যুবতী বয়েসের বায়েস্কোপ !

সমগ্র ঝুপ-ঝাপ পতন শব্দ বৃষ্টি লিখছে বঙ্গে
অসহিস্নু উপদ্রুত অঞ্চলে ত্রিপলে ঢেকেছে মেঘ !




৬৫








No comments:

Post a Comment