Tuesday 11 September 2012



ধরো বৃষ্টি হবে , রাজার আসন ফেলে 
ছুঁয়ে যাবে বৃষ্টি অগুন্তি গাঁ হ্যাচাকের আলোয় 
কীর্তনের আসর ;
কে যেন বলেছিলেন এবার বৃষ্টি হবে না তেমন , যেমন
গত বছর ভেসেছিল চণ্ডীমণ্ডপময় ছেঁড়া পাণ্ডুলিপি 
প্রেমিক- পাগলদের বসার ঘাট । 

ধরো কচ্ছপখোল গ্রাম বৃষ্টিতে ছয়লাপ ,

দিস্তা দিস্তা খাতায় কবিতার নবজাগরণ ,
উত্তরের আকাশ সন্ধানী দৃষ্টিতে পাতার স্নানে দেখছে
আগামী ফসলের আমন্ত্রণ ;
নৌকাঘাটায় মাঝিতে-মল্লায়
বাউলে-ফাউলে রমণ সঙ্গীত ,
পুনর্জন্মের সন্ধানে বীজের গুপ্ত শক্তি ভেঙ্গে মাথা তুলবার
দৃঢ় প্রয়াসের অনুভব ধরে রেখে কৃষক
বলেছেন , "বৃষ্টি আয়" ।

অবশেষে সত্যি বৃষ্টি নেমে আসে আহ্লাদী চোখের জলের মত ,
রাজার আসন ভিজতে না ভিজে
সারা দেশ জলের নিচে ;
রাজাও অনেকবার ভেবে দেখেছেন
" মেঘনাথ সাহা " বৃষ্টি চাইতো কি চাইতো না জানা যেত
যদি একবার !








২৩









মেয়েরা চোখে নোংরা হলে আঁশটে গন্ধ ছড়াই !
আমরাও চোর পালানোর পড় যেমন শোরগোল তুলি
তদ্রূপ পাড়া গেল , পাড়া গেল চিৎকারে
ঘুমন্ত শিশুকেও বুঝিয়ে দিই এই শহর , এই গাঁ-গঞ্জ আমাদের
চিৎকার সম্বলে বেঁচে আছে , তুমিও শিখে নাও

আমি বিশ্বাস করি মেয়েটা বেশ্যা । প্রতিটি নাগরিক রাতে
তার ঠোঁটের কষে নামে গাঢ় নিষিদ্ধতা ,
বিকৃত অঙ্গ চালনায় সুখী পুরুষ এবার মোলায়ম সারসের
পালক খসা মুগ্ধতায় মুখ ধুয়ে ফেলে
শরীরের দাগ মুছে ফেলে থার্টি বাসের পা'দানিতে ফেলে আসে
মোহময়ী আগুন অঞ্চলের স্মৃতি ।

অথচ , মেয়েটিকে আমি বেশ্যা বলেছি , আমিই বেশ্যা বলেছি ।
অথচ, মেয়েটিই শুধু গন্ধ ছড়াই
অথচ , মেয়েটিই শুধু বক্র দৃষ্টির অন্তরালে ,

অথচ , ভোগী নয় , ভোগ্যরা গন্ধ ছড়াই সমাজে
অথচ , অশুদ্ধ যৌনাচারে ভোগীরাই বিচারক ।

অথচ , তুমি শোরগোল তোল ।
জানি , জানি জানি এক বধির থেকে অন্য বধিরকে শোনানোর জন্য
তোমার আওয়াজ ,
অথচ , মেয়েটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে নিরুচ্চারে কত কথা বলে যায় আগামীর
মায়ের কানে কানে  




















৯৮







উপর ঠোঁটের বা'পাশে উপরে যেখানে কালো তিল
ঠিক ওখানেই মায়েরও তিল ছিল ;
মাও ঠিক আমার মত উজ্জ্বল শ্যাম বর্ণ
হেসে উঠলে ডান গালে টোল খেত
আমার স্বামীর মত বাবাও মায়ের কপালে চুম্বন করে অফিস যেত ।

আমার ও মায়ের মধ্যে বাইশটা বসন্তের সেতু ছিল ,
আলতা পায়ে , সিঁথিতে বড় সিঁদুরের টিপ খোঁপায় বাঁধা
নানা রংবেরঙ্গের ফিতে , আঁচলটা হ্যাঁচকাটানে খানিক
মাথায় তুলে বিকালে পাড়ায় বেরোলে ---
লোকে বলতেন " চৌধুরী বাড়ির রাণী বেড়িয়েছেন পথে "

এখন , ঘন ঘন আমি পথ ভাঙি , মায়ের আলতা ফিতে
মাথার কাপড় অযত্নে ম্লান ,
আমিও দত্ত বাড়ির বড় বঁধু পরিচয়ে পরিচিত হয়েছি --
তবুও দেখি
যে লোকগুলো একদিন মাকে রাণী বানিয়েছিলেন
তারাই আজ টানছে আমার আঁচল




৯৮





কোটি মানুষের সাথে বাবংবার সেতুবন্ধন
লোকায়ত জীবনের প্রয়োগশালায় ;
ভুল হয় , ভুল হয়ে যায় চরম পিপাসিত অধ্যায়
যে হাত লেখে --
কি জানি , এখন দেখি সে খুঁজছে ভাতের থালা ।

হাজারও গলার সাথে গলাগলি হাত ধরাধারি শেষে
এখনও অচেনা লাগে
গৃহস্ত জীবের বেদনার রঙ ;
বিমূঢ় প্রত্যয়ে চেনাজানা স্বরলিপি গান হতে চাই
প্রকৃতি প্রস্তাবে রাখে সুর ; আহা ,
সমস্তই হাস্যস্পদ
প্রণয়ে আদি-দিগন্ত হেটে হেটে ক্লান্ত পথিক ;

চিরায়ত নির্মাণে পূর্বসূরি থেকে সংক্রমনিত অবক্ষয়ে
বিস্ময়ে বিস্মিত কাঁপা হাতে
কবিতা লেখার রাতে জেগে থাকে অভুক্ত যন্ত্রণা !




৬৭





সহজ-সরল বাসের হাতল ধরলাম ,
পা'দানিতে পা রাখতে না রাখতে
পৃথিবী ঘুরে গেল ;
বাসনে বাসনে কলতলা যুবতী হোল ।

বেশ সরলসিধা বাসে আমার পাশের হাত'টি ,
স্বাভাবিকের চেয়েও ঢের স্বাভাবিক দৃষ্টি ,
ঝুঁকে পড়ে বাস জানালায় পৃথিবী সন্ধানী -
শরণাগত মূর্তমান প্রতীক !

সেদিন খবরে ছবি দেখে চমকে উঠলাম !
লোকটি নাকি সাতবার রেপধারি
দৈবাৎ সাক্ষাতে খুনি আসে , আসে মাতৃহন্তক
কে নামে , কে ওঠে বাসে
এ পাড়ায় শারদীয়া দুর্গৎসব ।

বুঝেছি এসবই সহজতর ,
আর অজান্তেই সব হন্তক ভবিতব্য নিয়ে চোখের
দৃষ্টি প্রদান , এসবই একান্ত ব্যক্তিগত অনিচ্ছাধীন অত্যাচার
খোলা চোখে কানামাছির দিনকাল ।



৭৮



ঈশ্বর ছদ্মবেশী , সমস্ত অধ্যায় জানেন নৌকার খোল
সেঁউতির বোঝাপড়া এবং জল-বৈঠার সব সন্ধি প্রস্তাব ।
নেপথ্যে যত অন্ধকার হোক , জরায়ু প্রদাহের মাঝে শিশু হাসি ,
বিকৃত চিন্তনে পিতৃব্য ব্যাধি আর সমগ্র অসুস্থতায়
মাঝে সময়ের দংশন কীটের হৃদয় বিদারক জ্বালায়
ঈশ্বরও পন্থাবিহীন জগন্নাথ ।

অর্থাৎ অখিলে সকলেই ব্যাধিগ্রস্থ গোলকধাঁধাঁয়
পর্যায়ক্রমে সত্য- অসত্যের ক্রমিক সংখ্যাধিক্যর পরকাষ্ঠা ,
ঈশ্বর সংবিধানের ফাঁকে অজস্র ফন্দিফিকির আর
অনিদিষ্ট লোভনীয় ঢেউ ভাসতে ভাসতে
পরম্পরার বনেদী ঐতিহ্য ;
ঈশ্বর নিজেই বোঝেন এই অস্তিত্ব সংকট ,
উড়ন্ত শিমূল তূলাও জানে তার ভবিতব্য , নিরুপায় !

ঈশ্বরও ঠিক ঠিক ততোখানি আমার মতই সুযোগ সন্ধানী
যতখানিতে আমিও পিতা হয়ে যায় গ্রহদোষে !




৫৬




পরম্পরা থেকেই আমাদের আঁধার ঘর ,
আমাদের দেহতত্ত্ব , যার প্রথমভাগে সন্ধানী দৃষ্টি
দ্বিতীয় ভাগে রাধিকার বিরহ-ব্যথা ।

সমব্যথী যে চিরতরে , সে চেতনা বিলোপে
নীলে মিশে নীলকান্ত ;
তার ঈশারাতে তারা খসে গোলাপের বনে , বুঝি
সেখানেই ভালোবাসা দৃঢ় হয় গন্ধে গন্ধে ,
রাতের গদ্যে বুঝি সেই গন্ধে বিহমিত খোঁপার বেল ফুল লুটাই বিছানায় ।

পরম্পরা শকুন হই , হই দেবদূত ,
শরীরের অণুতে ঋণাত্মক চেতনা বিগলিত হয়ে গেলে
দেহতত্ত্ব হাঁসের মুখের মত ক্ষুধার্থ , আকাশে দৃষ্টি ,
প্যাঁক প্যাঁক জানিয়ে দেওয়া আছি ,

দেহতত্বের শুরু আগুন মালসায় , শেষ কলসি জলে ।


৬৫




এমনকি বিভ্রম দেখলাম অপেক্ষার তরঙ্গে
নিমেষে ভুয়োদর্শী জাতিস্মর
নীল মিশে গিয়ে নীলে পড়ে আছে খোলা দাওয়া
গোল্লাছুট মাঠ , অসুস্থতার রঙ মেখে নিয়ে শরীর
সাতটা রঙ সব মিথ্যা , মিথ্যা অজুহাত ।

অপেক্ষারা বসে থাকে অপেক্ষায়
অকাতর মেশে বাতাসে পুনর্বার গন্ধক সন্ধ্যা
অপঘাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাই
যাপনের কুঠির
এই শহর মৃত্যু লেখে , মুছে দেয় আঘাতের সব দাগ ?

যদি , অচেতন কিম্বা ভুলে থাকা যেত
অথবা শামুকের খোলস অভ্যন্তরে অনুভূতিহীন জলহাওয়া ভুলে
দুদণ্ড নির্বিষ অস্তিত্বে ,
বুঝি সখ্যতা ছিল এখানে মানুষে মানুষে ?

এখন তবে শিক্ষানবিশ পাঠে মনোনিবেশ ,
বিরামহীন মুহূর্ত গুলো দু'হাতে ছড়িয়ে শবাগার পাঠে
থাকি ব্যাস্ত , তবে কি পুনরায় আগামীর জন্মে
ভ্রান্ত প্রলাপে জাতক কাহিনী ?




৭৬




বাঁধের বিপদসীমা ভাঙছে জল , রাতে- দিনে ,
পায়ের নিচে মাটি সরছে ;
একটা মাটির দেওয়াল থেকে অন্য একটি
দেওয়াল ঝুপ করে খসে পড়া শব্দ ,
নীম গাছে ঝোলানো দোলনা কোথায় রাখবে
ভাবতে ভাবতে
সূর্য সরে গেল পশ্চিমে মিঠা জলে ।

এখন শুধুই মাটির ভাঙাগড়া আলো অন্ধকারে ,
প্রকাণ্ড গাব গাছে মগডালে তির্যক শকুন
গাঢ় অভিমানে ,
কোথাও দৃশ্যর অভ্যন্তরে গোপনীয় খয়রাত
দান সামগ্রী লোলুপ দৃষ্টিতে জল মাপছে ,
আড়াল - আবডালহীন স্নানাগার খুলছে
যুবতী বয়েসের বায়েস্কোপ !

সমগ্র ঝুপ-ঝাপ পতন শব্দ বৃষ্টি লিখছে বঙ্গে
অসহিস্নু উপদ্রুত অঞ্চলে ত্রিপলে ঢেকেছে মেঘ !




৬৫








যে


অপূর্ণের নেশা ব্যাতিব্যাস্ত সর্বদা নিজের অনুকুলে
পতনের পাশা উল্টাতে ; 
পূর্ণের মধ্যে নিঃশেষ অভিমান , যে পুনর্বার চাহিদার ঘরে
ফিরে এসে বলবে , প্রেম এখনও চিনিনি তোরে ; 

অতএবঃ পূর্ণতার মধ্যে দ্বিতীয় ইচ্ছা নেই , পুনর্জন্মের
প্রাদুর্ভাবের প্রত্যাশার হা-হুতাস নেই
যে জ্বলেই থাকবে জিরো ওয়াটের বাল্ভের মত আঁধারে ! 


অপূর্ণের এই পুঁজ ক্ষরণ চলতেই থাকে , ঝরে পড়ে
রহস্য স্মৃতি , লৌকিক কলা থেকে অপসৃত জ্ঞ্যানী মুখ
দূরে সরে আবছা আবহ গড়ে ওঠে ;
সকল প্রজন্ম অর্ধমৃত অথবা মৃত্যুর প্রতীক্ষায় , জেন কেউ নেই
যে দংশিত ফুলে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে বলে যাবে
" সব ঠিক হয়ে যাবে " ।

এভাবেই সমাপ্তি লেখা হয় , ক্রমান্বয়ে জাগতিক ছন্দিত-স্পন্দিত
দৃষ্টি বিভ্রমে জনাকীর্ণ প্রান্তরে পৌঁছে গেলে
হাইওয়ে সোজা শূন্যতা ;
আর এই শূন্যতার আদর্শ আমাদের বাঁচিয়ে রাখে পুনর্বার পুনর্বার
ফসলের দিকে ,
অপূর্ণতার মধ্যে ভেসে থাকে সাগরের গহিনতা !











৭৮










ক্রমশ স্পষ্টতর হয় বাজার গোটানোর দৃশ্য ;
বেচা-কেনা সাঙ্গ হলে , কেউ ঘরে ফেরে , কেউ
আগামীর প্রস্তুতিতে বীজের দিকে স্নেহে চোখ রাখে ;
গোধূলিকে মাটিতে মিশিয়ে রাত মিশে যায় জানালায়
খোপে খোপে কুপি জলে
ধানের নাদা থেকে পিয়াসী গন্ধ ওঠে হুতুমের চোখে
জাগে নেশা ,
ক্রমশ স্পষ্টতর হয় বাজার গোটানোর দৃশ্য !

বাজার গুটিয়ে গেলে পড়ে থাকে কিছুক্ষণ পায়ের চিহ্ন
বৃষ্টি আসে , বৃষ্টি যাই , বাজার বসে , বাজার গুটিয়ে
যাই , পড়ে থাকে শূন্য , পড়ে থাকে অধিকতর শূন্যতা ।

ক্রমশ এভাবেই ঘটে বাজারের উত্থান-পতন
কেউ কেউ বিক্রিবাট্টা শেষ করে হাটতে থাকে জন্মের দিকে
কেউ থলি বাজার মুখো
কেউ কেউ ফিরবার পথে দ্যাখে রাজাও ফিরছেন ঘরে
কেউ কেউ আশ্চর্য , ভাবেন
এই বাজারে রাজাও বাজার করতে আসেন ?
















বন্ধু , সিঁথিতে সিঁদুরের ছাপ মুছে গ্যাছে
মহাজাগতিক ঘূর্ণনে ;
সময়ের প্রবর্তিত চক্রে বৈমাতৃয় স্ল্যাং কলেজ ক্যান্টিনে
পদ্মের মত জেগে থেকে কীটের দংশনে ঘুমিয়ে আছে
জীবনের প্রথম মাতৃ শব্দ ;

আরো ক্ষীণতোয়া হবে এ প্রবাহ !
আদুরে মুখ , স্নেহ চুম্বনে বাংলিশ বলতে বলতে
গরগরিয়ে লিফট ভাংছেন পিতা ,
এসো , এসো স্নান করে এসো , ধুয়ে এসো সমস্ত ময়লা
আজ বৃষ্টি হবে , খিচুড়িতে
মাখামাখি হবে এই রাত
আজ শুধু বাংলাতে কথা হবে , বন্ধু














০৯৮










কেননা গড়পঞ্চকোট পাহাড়ে আর যাওয়া হোল না ,
এখানে এতদিন তপস্বী রোদে পুড়ে এবার ক্লান্ত ;
পিচ রাস্তার সঙ্গে , দুধের সঙ্গে ,
বাসের পাদানির সঙ্গে যোগসূত্র রাখতে গিয়ে , এখনো কি
গড়পঞ্চকোট নিরিবিচ্ছিন্ন আছে ?
শুধু , এবার পুজো নয় অনেক গুলি পুজো কাটিয়ে দিয়েছি ,
আর এখান থেকে হাওয়ায় উড়ে প্ল্যাস্টিকের জলের বোতল
খাবারের মোড়ক ছোট-বড় প্রসাধনী
গড়পঞ্চকোটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে
আমি হাসপাতালে শুয়ে দেখছি
সমস্ত আবর্জনার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে হাসপাতাল , আমিও
দৌড়ে দৌড়ে ছুটছি
আরে , এখানে একটা ছোট্ট নদী ছিল , সামনেই তো
ঝিলে পাখিদের ঘর ছিল ,
গড়পঞ্চকোটে তো এতক্ষণ পৌঁছে যাওয়ার কথা !

গড়পঞ্চকোটে যাওয়া হোল না !
যাকে চিনতাম আমি , সে অজস্র ভারে এখন যথেষ্ট বুড়ো
হয়েছে , শরীরে ঝুঁকে পড়া চিহ্ন ,
পা চালিয়ে ফিরবার পথে দেখছি বারংবার ভুল পথ , চাকার দাগ
গুলো অনুসরণ হাঁটছি
জন্মভূমি নয় কোন শহরের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি , বারবার ।

















৫৬









শিয়ালদহ মুখি দঙ্গল পায়ের ঢেউ বাড়ে ,
টালমাটাল বাসের চাকায় তীব্র প্রতিযোগিতা ,
চায়ের কাপ হাতে উসখুস যাত্রী
তাতানো পিচ থেকে গরম হল্কা উঠছে
ছাঁদের উপরে ট্যাঁপ কল খুলে , মা , ঝটকা খান
মুখ চেপে হেসে ওঠে ছোট বোন , ট্রাম লাইন থেকে
বিশু মাতাল চিৎকার করে বলে
" আধার নেমেছে , চারিদিক আঁধার " , দেখছি
ঘুড়ির ফাঁক দিয়ে অরুণ আড়াল হচ্ছে পৃথিবীর ---
এবার একে একে অন্ধকারে দেবদেবীগণ পড়ে
নিচ্ছে রাতের পোশাক
ধুলো- শব্দ- গন্ধে মাখামাখি শহর ,
গাছ থেকে পাতার অভ্যন্তরে অশরীরী
নিয়ন বন্যা চিরে দিয়ে
ধীর লয়ে , সমস্ত জনপথ জোনাকিতে লেপে দিয়ে
শ্যাওড়া গাছের দেবতাকে প্রণাম
জানাতে জানাতে
নেমে আসে শহরের বুকে , দূরে
শঙ্খধ্বনি , কোলকাতায় সন্ধ্যা নামে তক্ষুনি

















৮৯৭







মুখোমুখি বৃষ্টি হবে বলে , আমি এখানেই রয়ে গেলাম ;
বিকাল বড্ড গুমোট , জানি , তবুও
তুমি বেরোবে , এখানে বৃষ্টি নেই ,
তোমার মনের চেরাপুঞ্জির মত সে মেঘ নেই
যে ভিজাবে আমায় ।
আমিও তোমার ডাকের কাছে পৌঁছতে পাড়তাম , কিন্তু
বাগানে খা খা রোদ্দুর ফেলে
জলের কাছ পর্যন্ত নেমে যাওয়া ভাল ,
প্রচুর বৃষ্টি হবে এবার ,
শুকিয়ে যাওয়া গোলাপরা গন্ধ দেবে --
বাসন্তী দেবে মুগ্ধতা , এখন কোপানো
শক্ত ঢ্যালায় কি পর্যাপ্ত বৃষ্টির প্রতীক্ষা ; বুঝি ,
যেতে পারলে বেশ হতো , এবার
ঘরের সামনে খেত হবে ,
বেগুন লংকা পালং মাথা উঁচিয়ে বেয়ে যাবে ;
আমাকে না পেয়ে ফিরে যেও না
যখন বৃষ্টি হবে , এখানে
তোমার ফোনে আমার বৃষ্টির গান বাজলে
তুমি সোজা চলে এসো এখানে ---
কেউ কিচ্ছুটি বলবে না !











৪৫







কাঙালি নয় , বৈভবে দেখি তারে ,
অদ্ভুত রঙিন ফুটপাতে নিজের ছায়া নিয়ে ঘোরে ।
দশটা - পাঁচটা অফিস যাত্রী ডাস্টবিনে ফেলে কিছু অথবা
নহবৎ সুরের উচ্ছিষ্ট
কুকুরের সঙ্গে মুখের মাখামাখি ; অনেক , অনেকবার
এই শহর ঘুমিয়ে গেলে শিশুর কান্নায়
ল্যাম্পপোষ্ট , ছায়া-আলো - ফুটপাতে , বাবুদের
গাড়ি বারান্দা শেডে
কখনও কখনও গান , গাও ,
সেই গান বোধহয় রাজা , নবাব হারেম
থেকে শিখে নেওয়া ;
শতাব্দী প্রাচীন কোন এক জাহাজঘাটা থেকে
তোমার পিতা , তোমাকে এখানে পাঠিয়েছিলেন
শ্যামলী ভূমির লোভে ,
এবার বুঝেছি তোমায় ,
প্রথমবার দেখা হয়েছিল বৈদিক জমানায় , তারপর
যুগে , যুগে , দেবী বিসর্জন রাতে
মন্দির থেকে মন্দিরে , পাহাড়ের গায়ে
অজন্তা- ইলরার কাঁধে কাধে
রক্ষণাত্মক তোমার স্মৃতি সৌধ , না , না
এভাবে চুপ করতে বলো না -------------
এই অন্ধকারে
আর কতটুকুই বা অন্ধ হবো আমি !


















৮৭










স্বপ্ন এবং স্বপ্নের ভেতর গদ্যময় মানুষ ।
পরম্পরা ঠোঁটে স্থবির সময় ,
তখন ঢেঁকিতে ধান ভানা শিবের গাজন মহোৎসব
প্রাপ্তি নেশাই চুপ ; সমস্ত মানত লেখা হয়
ভূমিকম্পের পরে দীর্ঘতম আবেদনে ।

আসবে সে সমস্ত নাভিশ্বাস নিয়ে অপরাহ্ণে নয় -
গাঢ় কোন প্রজ্ঞান অন্ধকারে ,
পেতভূমি থেকে উঠবে যে সমস্ত জীবনের হ্রস্বধ্বনি
সে সবের মর্মোদ্ধার পৃষ্ঠায়
লেখা রয়েছে কোন দৈববানী , যা জীবন চেনাবে --
এক একটা ঠোঁট থেকে রাতের নির্ভেজাল কাব্য
আসুরিক উচ্চতায় পৌঁছে গেলে
ঠিকই খুঁজে পাবে নিষিক্ত চরম অধ্যায় !

এভাবেই ভবিষ্যৎবাণী লেখা জীবনের ,
অতলান্তিকের মধ্যে পলল অন্ধকারে খনিজের অন্ধ অনুকরণে জন্ম
আগামীর শিলালেখে বর্তমানের সমস্ত ছোঁয়াচে

















৬৫









স্বপ্ন এবং স্বপ্নের ভেতর গদ্যময় মানুষ ।
পরম্পরা ঠোঁটে স্থবির সময় ,
তখন ঢেঁকিতে ধান ভানা শিবের গাজন মহোৎসব
প্রাপ্তি নেশাই চুপ ; সমস্ত মানত লেখা হয়
ভূমিকম্পের পরে দীর্ঘতম আবেদনে ।

আসবে সে সমস্ত নাভিশ্বাস নিয়ে অপরাহ্ণে নয় -
গাঢ় কোন প্রজ্ঞান অন্ধকারে ,
পেতভূমি থেকে উঠবে যে সমস্ত জীবনের হ্রস্বধ্বনি
সে সবের মর্মোদ্ধার পৃষ্ঠায়
লেখা রয়েছে কোন দৈববানী , যা জীবন চেনাবে --
এক একটা ঠোঁট থেকে রাতের নির্ভেজাল কাব্য
আসুরিক উচ্চতায় পৌঁছে গেলে
ঠিকই খুঁজে পাবে নিষিক্ত চরম অধ্যায় !

এভাবেই ভবিষ্যৎবাণী লেখা জীবনের ,
অতলান্তিকের মধ্যে পলল অন্ধকারে খনিজের অন্ধ অনুকরণে জন্ম
আগামীর শিলালেখে বর্তমানের সমস্ত ছোঁয়াচে











৭৬










নেপথ্যে এক স্বচ্ছ বরফের স্ফটিকের মত
দর্শন পড়ে আছে ; চার প্রহর সেই কোমল মেধ ত্বরিত
নষ্ট সাম্রাজ্যর দিকে নিয়ে যেতে চাই , এই সব
মেরু বিপর্যয় দিকভ্রষ্ট নাবিকের ন্যায় এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই
কূলের দিকে , যদিও অস্তিত্ববিহীন সেই কূল
যথেষ্ট অন্ধকারে নিবদ্ধ থেকে উৎসাহিত করে যাই
জল- ডাঙ্গার এই রূপ কানামাছি খেলা !

প্রাকৃতির প্রস্তাবনায় জিরাফের গ্রীবায় রয়েছে রসদের নেশা ,
যাকে ঘিরেই তার যত উন্মাদনা , শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায়
ক্ষুধা সর্বোত্তম সত্য এবং প্রকাণ্ড গহ্বর দিয়ে যায় ,
এই শূন্যতার মধ্যে প্রাণীদের সমস্ত সম্ভাবনা
উজ্জ্বল থেকে উজ্জলতর নিষিদ্ধতা ছড়িয়ে দেয় ,
পিতৃপুরুষ মরণের আগে অথবা মরণের পড়ে
লীন হতে চেয়েছিলেন সেই কস্তুরিনাভ মেধ গন্ধ রাতে !

এভাবেই স্থলে প্রসিদ্ধ হয় জীবন , অসংখ্য জীবন
পুনর্বার , পুনর্বার এই সমস্ত চিরায়ত খাদ্য সামগ্রীর দিকে
ধাবিত হয় পৃথিবীর যৌথ খামারে !














৫৬












আমি আর তুমি রোদ পোহায় দাওয়ায় আজীবন ।
আমার ছেলের মা তুমি , আমার কাছে জননময়ি তুমি ,
ছেলের কাছে মা । মাঝে মধ্যে যখন একা থাকি অথবা একা থাকতে চাই
তখন আলতো টানে ব্লাউজের হুক খুলে দিই
কাঁদা কাঁদা স্তন পাশ ফেলে পেছনের বাঁক খাওয়া পিঠে
ছোপ ছোপ রোদে পোড়া চিহ্ন ;
রোদ পোহাতে পোহাতে আমরা গান শুনি
পাশের বাড়ির পরকীয়া গৃহস্ত পায়রাদের ঘরে ফেরা দেখতে দেখতে
পান খাওয়া দাঁতের হাসিতে
গড়িয়ে পড়ি তোমার গায়ে আমি , তুমি হাসতে হাসতে মশা তারাও ।

কদাচিৎ তোমার ব্যবহারে ক্ষুণ্ণ হয়েছি ,
তুমিও আমার ব্যবহারে বা ,
সন্তানের ঠোঁটে চুমু খেয়েছি দু'জন
আমার প্রতীক্ষায় রাতের খাবার না খেয়ে বসে থেকেছ তুমি
জ্বরে সারারাত কপালে জল পট্টি বেঁধে দিয়েছ তুমি
আর জ্ঞ্যান এলে ভেবেছি কত্ত ভালোবাসো আমায় ।

এখনও আমারা দু'জন রোদ পোহায় ,
বয়স হয়েছে ,নাতি- নাতনিদের কোলে তুলতে গিয়ে বুঝেছি যখন
তখনও পিঠাপিঠি
আমরা দু'জন জন্ম- জন্মান্তর রোদ পোহায়
বুকে বুক নিয়ে থাকি অথচ
এই তাপে দুজনার অঙ্গ পুড়েছে প্রতিদিন
না আমি দেখেছি সেই ক্ষত , না তুমি !











৬৫৪






জিভের ভেতর অতৃপ্ত লালসা , সেই আজন্ম
মাংসের গন্ধ মুগ্ধতা ছড়াই আজো ? আজ পরিশেষে
রক্তের ভেতর মৃদু কম্পন , মদের থেকেও ঢের গাঢ়
সলজ্জ নেশা তৃপ্তি খোঁজে ; আশ্চর্য গৃহকোণের নিষেধ
উপেক্ষা ক'রে দৃশ্যায়িত গোপন পাপড়ি মেলে ফুল ,
এভাবেই সুখ আসে , চেতনে- অবচেতনে মিশে আছে
মুখের লালার সঙ্গে শরীরের অহংকার ।

সমাপ্ত হবে এই রাত , ক্রমাগত স্পন্দনে হৃদয়ে হরিদ্রাভ
কফের মত ক্ষরণ ক্রিয়ার , এই মুহূর্ত চরম শিখর লাভ ক'রে ,
মানবিক অগ্নিপাতে তুমিই প্রথমা , তুমিই দ্বিতীয়া
জিভের স্বাদকোরক উপেক্ষায় মাংসকুঁচি লবণের স্বাদ
ভাষা শিখে নাও , যে ভাষায় জ্যোৎস্নার শীতল সমাধি ।

অহেতুক এই রাত্রিপাত ? এবার সমাপ্তির দিকে এসো ;
লালা খসে গেলে যেবার স্বাধীন চিন্তা , দৃষ্টিতে তুল্যমূল্য বিভ্রম
লালাতে ঘর হয় , তার মধ্যে হাঁসের ডিম ,
মৃদু মৃদু এই সব কম্পন সুখি অন্ধকারে মিশে আছে
একদিন নীড়ে নীড়ে কলরবে পুনরায় স্বখেদের লালাক্ষরণ 














৪৩












শিরদাঁড়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল
সূর্যের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসাবে মাথাকে সোজা ধরে রাখার জন্য ;
এখন সূর্য প্রণাম করতে গেলে
সূর্যের দিকে তাকানোর সাহস হারিয়ে ফেলেছি ; সম্রমে নয় ,
ভয়ে মাথা গুটিয়ে যায় মাটিতে ,

মানুষকে চিনতে গেলে মানুষের কথার দিকে তাকিও না একদম ;
যে কালকে সাপ কে চুমু খাচ্ছিল
সে আজ তোমাকে চুমু খেতে এলেই বুঝবে
ঐ শরীরের অভ্যন্তরে গভীর রহস্য , দ্বিতীয়বার তার দিকে
না তাকিয়ে যে টুকু তোমার রঙ আছে প্রজাপতির মত
ছড়িয়ে দিয়ে উড়ে যাও গাছে থেকে গাছের মধ্যে ।

বড্ড ভয় হয় নিজেকে নিয়ে নিজেই ।
বিন্যস্ত ধাঁধাঁর মধ্যে সংগ্রামী জীবন একুরিয়ামের রঙিন জলের
মত চতুষ্কোণে ধাক্কা খেতে খেতে
ঈশ্বর কে শয়তানই বা কে
বুঝতে না বুঝতে
বাহান্ন পর্ব যায় আসে নক্ষত্রের নিচের পৃথিবীতে ;
যখন গভীর কোন ক্ষত চিহ্ন দিয়ে রক্ত ঝরে
তখন আশ্চর্য লাগে ------
একেই কি তবে বেঁচে থাকা বলে ?











৭৬















সম্বল বলতেই হৃদপিণ্ড , যা
মিশে যাবে একদিন অবিনশ্বর দ্বিতীয় জন্মে ;
এযাবৎ , বড় কাছাকাছি থাকি আমি'র ,
অভ্যাস বদল ক'রে হাওয়া মাটির মধ্যে মিশে যেতে চাই
নিঃসীম দমকা হাওয়ার ঘাত- অপঘাতে
নশ্বর জন্ম কুঠির বড় একা --
দুর্যোগময় অভিঘাতে শুধুই পতনের শব্দসম্পাদন আর
উচ্ছিষ্টের আড়াল থেকে
মার্জারের ঝড় থেমে যাক , করুণ দৃষ্টি ।

বিস্মিতপ্রায় জন্মে অনাবাদী জমিনের আর্তনাদ ,
একদিন , জন্মের সুতীব্র চিৎকার থেকে আজ
নিষেধের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তারিত
মায়াময়ী অভাব
ছুঁয়ে যায় রাত থেকে প্রভাত ;

পর্যাপ্ত রতি বিভ্রাট স্মৃতি- বিস্মৃতির অন্তরালে
কর্মনাশা দিন খোঁজে ;
ভগ্ন মন্দির পাদদেশে ইতিউতি ছড়ানো শিলাখণ্ড যেদিন
শালগ্রাম শিলার মর্যাদায়
মৃত্যু অথবা জন্মের বিনাশের পথে পথে নতুন জন্ম
এবং সেখানে পুনরায় ব্যাধ ব্যাধি
কতখানি সহজ হবে , সে চলা ?















৭৬









কবিতা লিখি কেন ?
প্রশ্নটা অবান্তর নয় । বুকচাপা রাত আসে
প্রলয়ে প্রলয়ে কি দারুণ অভিমানে ;
কিন্তু প্রেমে পরাজয় নেই উর্বর অঙ্গ বলো রাক্ষুসি খিদে
মিটে গেলে শরীর চালনায়
এসে দাঁড়ায় অন্ধকূপ রাত , দেখি আমির মধ্যে আরো একটা
চুপসে থাকা আমি , যত ছায়া ভেবে দূরে সরি
সে ছিনে জোঁকের মত অস্তিত্বের রক্ত খেতে খেতে
আমাকে আবদ্ধ করে জ্বালে ;

কবির বুকের মধ্যে লিপিবদ্ধ সমাজ ,
কবির বুকের মধ্যে প্রেমের হলকা বান ,
কবির দৃষ্টির মধ্যে সমুদ্র পিপাসা ; যদি বলি এসব
আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে , যেমন বাচ্চা বাছুরকে দুধের বাট ;

কবি প্রভূত উপেক্ষা সয়ে সয়ে
পরশুরামের হন্তক কুঠার , যা কিছু গর্হিত অপব্যায় অপরাধ
সৃষ্টির নিয়মাবিরুদ্ধ তা
র বিরুদ্ধে 

কবির কলম কুঠারের হন্তক ধারালো মুখ !

কবি , ঈশ্বরের প্রেরিত দেবদূত ,
অশান্তি প্রলাপের মধ্যে করেন গোলাপের চাষ ,

যদি , প্রশ্ন ক'রো কবিতা লিখি কেন ?
আমি তোমার মধ্যেই লুকিয়ে থাকা গুপ্ত কথা
তোমার জন্যই উপঢৌকন পাঠায়














৮৭