..... ভ্যালেন্তাইন্স
পতনের সম্মুখে দাড়িয়ে আছে সমগ্র আলোক বিন্দু চুষে নিয়ে আস্ত এক সকাল , হিসেব বহিঃভূত দেনাপাওনা গণ্ডায় গণ্ডায় বুঝে নিয়েছেন সুনিপুণ হস্তে কাল , দাড়িয়ে আছি স্থির , সমরের প্রতীক্ষা ,
কিছু ডাক শুনতে পেলেই যে কোন মায়া এখানে রেখেই আমি ছুটতে প্রস্তুত । চিরকাল সুখ পাখির উষ্ণ পালকে আশ্রয় পেয়েছি আদর্শ মমতায় , শুধু এই তিন বছরের কিছু তিক্ত মায়া সইতে হচ্ছে এই যা , কাকলি নেই ভাবলেই এখনো মাঘে ঘাম ঝরে শীতলতার । সন্তান কি সবসময় নিজ ধারা প্রাবাহিত রক্ত ? আমার বা আমাদের শরীরের সব উষ্ণতা গুলো কি পেয়েছে সঠিক করে ? কই আমার বেলায় তো দেখছি না সেই সূচক ? সামনে পড়ে আছে সকালের দৈনিক , শুধু মৃত্যু সংবাদ , মৃত্যু এতো মূল্যবান বলেই কি পাতা জুড়ে কান্না ? "বাবা বাজারে যাবেন না ? " সম্বিৎ ফিরে আসে , পুত্রবধূর ডাকে , " হা , ব্যাগ টা দাও তো ?
আমার একমাত্র পুত্র তুহিন , স্বভাবে আমার বিপরীত ধারা , আমার উচ্চতা পাইনি , আমার গলা পাইনি , এমনকি আমার সাহসও পাইনি একটুকুও , তবু মেধা পেয়েছে আমার থেকে ঢের বেশি , কি সব মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানির সি ই ও , কোথায় আমি ইন্ডিয়ান আর্মির প্রাক্তন হাবিলদার ! বিয়ে দিয়েছিলাম ঘটক পুকুরের বনেদী পরিবারে , বৌমা ইংলিশ এম এ , সুদর্শনা , মিতভাষী ,
কাকলি চলে যাবার পরে বিয়ে দিয়েছিলাম সংসারের শ্রীর প্রয়োজনে ।
তুহিন অফিস চলে গেলে বাড়িময় শূন্যতার আঁধারে ডুবে যায় আমি , দায়িত্ব গুলো তুলে দিতে চাই তুহিনের কাঁধে , কিন্তু দেখি এব্যাপারে প্রবল অনিহা বা স্বভাবে কুঁকড়ে যায় , গতবার দুর্গা পূজার চাঁদা নিয়ে কি যাচ্ছেতাই না হল , সেদিন রবিবার আমি গেছি বিকালে আমাদের ব্রিজের আসরে "পরন্ত বেলায় " , ওখানে আমাদের বয়সী বন্ধুদের সাথে তাস খেলে চা খেয়ে রাজনীতির অপ্রান্ত থেকে শেষ পর্যন্ত দৌড়ে এমনকি হাতাহাতি করে বাড়ি ফিরি সাতটায় , হঠাৎ ফোন , " বাবা এক্ষুনি বাড়ি আসুন " কি হয়েছে ? " "আপনি আসুন তারাতারি" , অগত্যা ফিরতেই হল , দেখি ক্লাবের ছেলে ছোকরা , কি ব্যাপার ? "আমাদের পাচ হাজার চাদা দিতে হবে " তুহিন মাথা নিচু করে , কাঁপছে , বললাম বৌমা তোমরা ঘরে যাও , চলে গেল , আমি বললাম এতো টাকা হবে না ভাই , আমি হাজার খানেক দিতে পারি ...... শেষ মেস অনেক কথা চালাচালি , ভয় দেখানো , আমি বললাম নিলে নেবে নইলে যাও এখন , যা কোরতে পারেন করবেন , ওরা শাসিয়ে গেল , আমি ঘর মুখো , দেখি পর্দা পেছন থেকে সরছে বৌমা ।
দুপুরে আমারা দুজন , দুপুরে খাবার পরে আমার ঘুম আসেনা অনেক দিন ধরে এক নিয়মে আমি কিছু বই নিয়ে বসি , মাঝে মাঝে বৌমা এসে পাশে বসে , আমার আর্মি শুনতে চাই , আমি বলি ন্যাফা বর্ডারের ৬২ এর গল্প , কি করে আমি বেঁচে ফিরলাম ঘরে এসব , মাঝে মাঝে লক্ষ করি
স্থির চোখে আমার দিকে তাকিয়ে ।
সেদিন দুই এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে নিয়মিত এই শরতে , একটু শিত শিত , খাওয়া হয়ে গেছে কিছুক্ষন আগে , আমি আমার ঘরে বসেছি , টেনে নিয়েছি পোস্টে আসা জার্মান আর্মি জার্নাল , দরদায় কড়া " আসবো আমি ? " দেখি বৌমা , বলি , " আরে এসো এসো " , নতুন শাড়ি , কপালে সিঁদুরের টিপ , পরিপাটি চুলের বাধন , যেন সাক্ষাত দেবী প্রতিমা , বলি , বল , চুপ করে থাকে কিছুক্ষন , আমি আবার বলি কি হয়েছে ? " "আপনার ছেলে আপনার মতো হইনি কেন ?" বজ্রাহত হই , বলি " সবাই কি সমান হয় " বল ? , " আমাকে আপনি গ্রহন করুন " আমি স্তম্ভিত ! একি কথা শুনি ? চুপ করে থাকি ক্ষানিক্ক্ষন , এগিয়ে যায় ধিরে , মাথায় হাত বুলিয়ে দিই , বলি , " মা তুমি আমার লক্ষ্মী , মাথা স্থির কর , ধিরমতি হও , অপূর্ণতার মাঝখান হতে তুলে নিতে হয় পূর্ণতার রসদ , লক্ষ্মী মেয়ে আমার , স্থির হয় সময় , নেমে আসে তার মাথা আমার পায়ে , বাবা !