Friday 24 August 2012

দশ ০৮


২২ শে শ্রাবণ 


ঢেউ পূর্ণজন্ম ছুঁত একবার
বিস্তৃত সুনীল জলস্তর পাতাল মেপে নিয়ে
লিখে দিতো অন্ধকার ভাঙ্গবার রহস্য
আহ্লাদী সন্তান
স্তনের বোটা থেকে মুখ তুলতে না তুলতে বেলা যাই
নামে দ্বিতীয় বসন্ত বাতাস
কালকের ডিম ভাঙ্গা কাঁক আজকে গৃহিণী
ফুরফুরে ট্রেন গতি ভাঙ্গে 


তস্যচুল ওড়ে হাওয়াই সম্ভ্রম জাগানো নারী গুছিয়ে রাখে
মোলায়ম হাতে
ছুটে চলা গতি বাদামের খোসা ফিনফিনে চারের কাপ
কাচা ছোলা মশলা মুড়ি বাউলের সুর ঢেউ ভাঙ্গে
এসে পড়ে বোলপুর
চুপি চুপি নেমে পড়ে লোকজন গৃহস্ত আসবার- আবদার

পূর্ণজন্ম লেখে কবি কাগজের মরূদ্যানে
অক্ষরের মান্ধাতা উপ্রে আধুনিক শেকড়ের হৈচৈ গর্ব
তেরোপার্বণ মান্দারবন
জেগে থাকে তামার পার্থিব ককটেল

কেউ বলে সে আসে - সে যায় , সূর্য জানে শুধু 

আজ বাইশে শ্রাবণ ! 


 কি নাম



কিছুটা পথ রেখেছি এখনও , যদিও স্থানচ্যুত
রাত্রির আড়তে নির্মোহি জ্যোৎস্না হুটোপুটি , আর
অদ্ভুত অনুতাপহীন চাঁদ একা জেগে আছে --
কলতলা পাশে হাঁসের ঘর ম্লানমুখে
রাত্রির অন্ধ ভাষা শেখে , এবং
সমস্ত নাজুক অভিমান ওখানে সহজতর হয় ।

তোমাকে চেনাবে প্রেম ,রাহুকাল ,যে গৃহস্ত হুতুম প্যাঁচা 

সে ঘুমিয়ে গেলে জানি তুমি আছো --
নচেৎ বুদবুদ নেই জলের
যদিও ধরে নাও সমস্তই ক্ষণস্থায়ী আপেক্ষিকবাদ - সর্বদায়
মনস্তাত্ত্বিক আক্ষেপ অথবা নির্বাণ রাতের মতো ---
যে প্রেমে ঘর ছাড়ে রাহুল , সে প্রেম চেনাবে , যেমন
ঘন বর্ষা কর্কশ দাদুরী ডাক চেনাই গ্রাম !

সর্বাত্মক অনুলিপি নিয়ে হৃদয়ের মঙ্গলঘাটে জরুথুরু চুপচাপ আমি ,
শিরায় পুরুষালী রক্ত , কে খুঁজে বের করবে কোন লোমকূপ
কামাগ্নি ? 
আত্মজ 



সতত পুরুষ এক কড়া নাড়ে বুকের অলিন্দে ।
নিরুত্তর থাকি , যৌবনের মানপত্র হাতে স্থিরকল্পে
আসে ছিন্ন চিন্তন
কে ব্যাধ কে ব্যাধি কে নিয়ে আসে বিশল্যকরণী ?
উকি দিই , স্বয়ম্ভু পুরুষ বটে , উজ্জল লাবণ্যপ্রভা--
কপোলের বা'পাশে ছোট্ট জুরুল , হাসলে টোল পরে গালে ,
মরি , আমাকে গলিয়ে দিতে কতক্ষণই বা নেবে ?

ভয় নয় , পুরুষোত্তম জন্মপিতার সম্মানের লক্ষণরেখা
ভাঙ্গবার শখ , আছে ; চৌকাঠের বাইরে দিয়ে এক'পা
দ্বিতীয় পায়ে গৃহস্তের মান্যতা মানি ।
আজ চুলে লাল ফিতে বাঁধি , পায়ে আলতা প্রলেপ
সমাজবিদ্যার বই বন্দ করে , আমিও মাতামহী !
আমিও হৃদয়ে পাচীন , আমিও সনাতনী !

পুনরায় কড়া নাড়ে পুরুষ , কেউ কি আছেন ?
ডাক শুনে ঝাপ দিই উঠোনে -- তবুও থেমে যায় দৌড় --
পায়ে বেড়ী পড়ে ---------
যদিও এই বেড়ী পরিয়েছে আমার স্বেচ্ছাধীনে অন্তরের আত্মজ 




আরোগ্য নিকেতন

শোকগাথা বিষাদ মুক্ত তবু অন্দর পেয়েছে
ঝিনুকের , বর্ণীল উগ্রচণ্ডা রাতে
ঘুমিয়েছে রাতের হরিণী
বাঘের ক্ষুদা নিয়ে রাত্রি জাগরণ
ব্যাভিচারি যন্ত্রণায় নেশা বাড়া শোক ।

দৃষ্টি দানব ।
জল ঝরে কীর্তনের পড়ে 

জোয়ারের শব্দ থেকে অথবা স্রোতের গতি থেকে
যে জীবন অমৃত খোঁজে অথবা পিপাসী
গোবর ছিটা খৈ উড়ানো দুপুর এসে
নিকেতনে মরণের রোগ দিয়ে যাই
আরগ্যের অঙ্গীকার কে রাখে কোথায় ?
বোধিবৃক্ষ শূন্যতায়

যাবতীয় উপেক্ষার নিশানায়
ব্যাধিগ্রস্ত শরীর
ক্ষুণ্ণবৃত্তিতে ব্যাধি নেই যদি বলেন ভিক্ষুক
ঐশ্বর্য চোখের দৃশ্যাবলীতে পার্থিব যে অসুখ সৃষ্টি ক'রে
হোমাগ্নি নয় ---
জলন্ত চিতায় গড়ে ওঠে আরোগ্যে নিকেতন ।





ইচ্ছা মৃত্যু 


বৃষ্টি , যদি জানতে চাও মৃত্যুর আগে কি চাই ?
বলবো , ফায়ারিং স্কোয়াডের সামনে বিপ্লবীকে
তোমার ছেলে বউ আমাদের সন্তান ,
বলবো , কৃষাণীকে , ওগো পক্ষিমাত কুলো হাওয়াতে
ধরবার শিল্প শিখিয়ে দাও অজ্ঞানেরে ,
বলবো , শ্রমিকেরে তোমার অদ্ভুত পাঁজরে
ওদের রঙিন আবর্তন ,
বলবো , ধর্ষিতা বোন আমার , এই দেশ এই দ্রোহ-কাল

আমার এবং তোমার ,
বলবো , পতাকাবাহী রাজনৈতিক হন্তকরে , মা , মা নিষাদ ,
বাল্মীকি স্তুপ হয়ে ওঠার বিদ্যা দাও ,
বলবো , বৃষ্টিকে , একই ভাবে ভিজিয়ে দাও , ধুয়ে দাও
সমগ্র মলিনতা , শ্রাবণে গান হোক ,
রামের গাছের কাঁঠালের পাতা খেয়ে যাক রহিমের ছাগল ।

এবার মৃত্যু আসতে পারো র‍্যাটেল স্নেকের ঝুনঝুন শব্দে
পায়ে তীর বিদ্ধ হয়ে ঘুমিয়েছিলেন মথুরাপতি
অমরত্বের প্রস্তবনায় লেখা নেই কোন নাম !









কীর্তনখোলা

চলে যাবো কীর্তনখোলা থেকে কীর্তিনাশার দিকে ,
কিছুই র'বে না জানি উর্বর শস্যগোলা আমুদে শরীর ।
কবরের মাটি ফুঁড়ে উঠে যাবে যে হাসনুহানা
তার নিচে জিরিয়ে যাবে দু'প্রহর নীলপরী
গান হবে বৈষ্ণব ।

তামাদি ফটোগ্রাফে দেওয়ালে লাজুক চোখের কিশোরবেলা ।

কিচ্ছু নেই রেখে যাবার , শামুখের খোলের অভ্যন্তরে
আঠালো অনুভব ছিল শব্দের বন্ধনে
রেখে গেলাম ----
ঐ শব্দে চোয়াল চিনে নিও

শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে চাঁদের রূপান্তরভেদ দেখেছিলাম
আঠাশ দিনে ; মোহময়ী আগুনে পুড়বার সাধ ছিল ,
পাণ্ডুলিপিতে সেই সমস্ত আকাঙ্ক্ষা
লাজুক কিশোরবেলা থেকেও সত্য ।







একবিংশ শতকের প্রথম অধ্যায়

তোমার লিপস্টিকে আমার মায়া মোহ রাগ ।
স্থানচ্যুত রাজনৈতিক মতাদর্শ বুকে রেখে
ডান বলো বাম বলো সাম্রাজ্যবাদী নেড়ি কুত্তার
ন্যাজে পকটা বেঁধে আগুন জ্বালিয়ে রাজপথ টায়ার পোড়া
বাসের হেডলাইট ভাঙা বলো --
নেই , নেই নেই আমি নেই
আমাকে স্থান দাও , এক ঘটি স্তন দাও ফুরফুরে চাঁদ
সোনার নোলক বসন্ত দাও 


ওসব বৈষ্ণব পদাবলী শাক্ত পদাবলী রাখো ।
রবীন্দ্র জয়ন্তী তে উৎসব হবে ঘোষ আমবাগানে
বিয়ারের ক্যান আর খাসির মোচ্ছব
তোমার ফিগার , আহা , হুটখোলা ব্লাউজে মাইরি অনুস্কা শর্মা
জ্বলছে জ্বলছে , নিম্ন আঞ্চল জ্বলে গেল
শ্যালা দু'গ্যালন ইউরিন বেড়িয়ে , আঃ তৃপ্তি , তৃপ্তি ,
শিরদাঁড়া যেখানে শেষ
তারপর থেকে তোমার অন্ধকার রাজত্ব , দেবী দাও দাও
মন্ত্রগুপ্তি দাও , বশীকরণ করো -----
দু'ই পর্বতে চরবার সখ গেল না , গেল না --
কত তপস্যায় পেয়েছি এই গোলটেবিল বৈঠকের অধিকার
টায়ার ক্ষয়ে গেছে সাইকেলের
জঙ্ঘার কালো তিল দ্যাখাও আমায়
কালো বিড়ালের মত তপস্বী করো
চণ্ডাশোক , চণ্ডাশোক

রাম রাজত্বের লোভ দেখিও না ।
আমার দেশ নেই , দেশের সীমারেখা নেই , ধর্ম নেই
শিককাবাব শুয়োরের মাংস দেশী সুঁড়িখানা ---
বাজী ধরেছি নিজের সাথে
আমার জয় - আমার পরাজয়
সাইরেন গাড়ির চোদ্দ পুরুষের মুখে থুঃথুঃ
মাংস দাও , নধর নধর থলথলে মাংস , চিতল হরিণী থেকে
রাজহংসী
রাতের কলা ভেঙ্গে পরুক তোমার শরীরের কারুকার্য ঘামে
তাপ উত্তাপ লীনতাপ ভেজা বিছানার গা বেয়ে
তামার তোমার যুবতী ঘাম
আমাকে বিদগ্ধ করো নিমেষে
পুরুষাঙ্গের গোপনীয়তা অর্ধেক লোক পুষে রাখে নিজের কাছে নিজেই
আমার জন্মে কোন ছুঁৎমার্গ ছিল না
না ছিল বেড়ে ওঠার মধ্যে
না আছে মৃত্যুতে
ঠোঁটের কষে কষে সেই সব উষ্ণতায় মরে যেতে দাও

তামাম আলো- আঁধারি গল্প চাই শরীরের ।
বীতশোক নয় কোন প্রেমের ,
কতখানি মা কে চিনেছি যে তোমাকে চিনবো ,
কোন আক্ষেপ রেখে পাগলা জগাই এর মত লাশকাটা ঘরে
বেয়ারিশ কুকুরের মত নম্বর প্লেট ঝোলাবো না পায়ে
বাস্তিল পতনের দৃশ্য অদৃশ্য গরিলা ছায়া যুদ্ধের চিন্তন নেই যে
ইতিহাস চেনাবে আমায় ----------
ছেঁড়া ইতিহাসের পাতায় থাকুক সম্রাট সাম্রাজ্য
আমার হাপরেরটান শরীর সম্বন্ধীয়
শালুক চিনেছে শালুক
প্রেমের অধঃতনে এসো নারী
দেশ কাল সময় সমস্তই আপেক্ষিক , শরীর আপেক্ষিক হয়েও
রহস্য জানে , ডুবিয়ে দাও , আমাকে ডুবিয়ে দাও
জীবনের আক্ষেপ নেই
নেই সমাজনীতির আক্ষেপ
দৃশ ধাতু অনড় প্রত্যয় দিয়ে তোমরা আকাশ দ্যাখ
গান লেখ সময়ের
রবি থাকুর ফুল চন্দনে একদিন মুখরিত থাকুক
আমাকে বঞ্চিত কোর না শরীর থেকে , রোগ দাও , রোগ দাও

আমরা কেউ কাউকে চিনি না ,পাশাপাশি ঘানির গরু ,
একবিংশ শতকের প্রথম অধ্যায় ধরে ঘুরছি দু'জনে
আমি নিত্য পিশাচসিদ্ধ পুরুষ
তুমি ডাকিনী বিদ্যায় পারদর্শিনী ,
আর আমাদের রক্ত খেয়ে খেয়ে ছুকড়ি থেকে বুড়ি
বয়সের দিকে ছুটছে পৃথিবী ।








বৃষ্টি 


আমাকে বাদ দিয়েও এমন বেহায়া বৃষ্টি হয়
তিলোত্তমায় , কাকে দ্যাখাও তুমি দেহপল্লবী,
স্নাত শরীর হতে বিন্ধু বিন্ধু জল,ওহে মুছে ফেল-
কাকে দেখাচ্ছ তুমি আগুনের লোভ !
এবার ভিজে নাও তোমার শেষ প্রণয়ে ,জলে স্থলে
অন্তরীক্ষে এসেছে তারই দিন , ধুধু পিচ রাস্তা ধরে
ভ্রম মরীচিকা টায়ার পোড়া গন্ধ- শুধুই রোদনের
দিন ভুলে ভিজিয়ে দাও নিয়ন বাতি হোক হাতে টানা

রিক্স , পাগলা মাতাল হোক বনেয়াদি মিনার ।

ভিজিয়ে দাও তুমি শরীরে মননে দহনে , এই বৃষ্টি
তুমি কাকে দ্যাখাচ্ছ ভয় ! কার হৃদয় ক্ষতে তোমার
প্রলেপ ! সোজা সোজা বাইপাস ধরে কীর্তিনাশা বৃষ্টি
আরো এগিয়ে যাও আমনের ক্ষেতে --
দ্যাখ , তিলোত্তমার চেয়েও কোন সুন্দর তিলত্তমা বঁধু
প্রতিক্ষিয়া দাওয়ায় আর বাখারিতে বাঁধা আছে সোনালী
স্বর্ণের উপঢৌকন ; যদি পারো তো বৃষ্টির ইতিহাস হও
সম ভালোবেসে - সৃষ্টির তিলোত্তমায় !





বন্ধু 


স্কুলের গেট থেকে হারিয়ে গেল সেই মুখ
যদিও এব্যাপারে আমার কিছু করার ছিল না
যদিও যদি বলতাম দাঁড়াও তবুও শুনত কি শুনত জানা নেই
এভাবেই হারিয়ে যাই

যদি বলতাম আমাকে নাও সঙ্গে , দেখিয়ে দিত তবে
একাদশ শ্রেণীর বিজ্ঞানের বই , আমি চরম মূর্খ ,
বই এর প্রথম পাতাতেই থেকে যেতাম আজীবন 

সেও ডিসটিংসন নিয়ে আবার হারিয়ে যেত

এভাবেই হারিয়ে যাই সক্কলে গেট থেকে , খেলার মাঠ থেকে
চৌধুরীদের রোয়াক থেকে -- এয়ারপোর্টের দিকে সমুদ্রের দিকে
পশ্চিমের দিকে , আমি নির্ভেজাল চোখ নিয়ে দৃশ্য দেখি
জোয়ান চাঁদ ওঠে গম খেতের কাকতারুয়া
আমার সাথে জেগে জেগে পাহারা দেয় পাচীন বিশ্ব








নিরুত্তর 


পরিমার্জিত সংস্করণে ভুখামিছিলে
গুলিচালনা শব্দ বাদ দেওয়া হল চুলচেরা বিশ্লেষণের পর ।
ভুখামিছিল শব্দে একটা তৃতীয় তৃতীয় ভাব থাকে
শিল্প ঘরানায় উন্নত উন্নত প্রথম প্রথম বিশ্ব ,
অবশেষে সর্বজন স্বীকৃতি পেল শিল্প ঘরানায় গুলি চালনা -----

তোপখানায় থরে থরে সাজানো সেই বিজয়ী রাইফেল --
আপাত নিরীহ বস্তুটার মধ্যে সেই উৎসাহ নেই যেকিনা রক্ত চেনে , 

তবুও রাইফেলের গায়ে শুঁখে দেখি রক্ত গন্ধ আছে কিনা -
নাহ! তবে কি ট্রিগারের আঙ্গুল রক্ত চোষক !

দৌড়ে বেড়িয়ে আসি , জেনারেল ডায়াস অন্তর্নিহিত কিছু
বক্তব্য রেখেছিলেন জালিওনালাবাগে
ক্ষমতা ঊর্ধ্বতনের স্বদেশও সাম্রাজ্যবাদের শাশ্বত জেরক্স কপি
ক্ষমতার প্রতিষ্ঠা শুধুই রক্ত পিপাসী














Thursday 23 August 2012

দশ ০৭


তিনি 


তিনি যেই ভাল বাসতে বললেন ,অমনি পাঠশালায় ঘণ্টা পড়া শব্দে
বালকের বই-খাতা-আসন গুছিয়ে নেবার মত দ্রুত
তাই 
আমরা সরে গেলাম তার কাছ থেকে ; 
যেই বললেন সম্পর্ক মায়া শরীর শুধুই বর্ম , শরীরের মৃত্যু
হয় , চেতনা অনন্তবিলাসী ---
সেই আমরা দশটা কুরুক্ষেত্র বানিয়ে উপঢৌকন পাঠালাম 
তার দ্বারে , সেও স্মিত হেসে গ্রহণের ভঙ্গিমায়
বললেন " তবে তাই হোক সভ্যতার নাম যুদ্ধ " 


ইদানীং আয়ুরেখা লেখে বৎসান্যয় কুঠিতে ,
ইদানীং সমস্ত কুরুক্ষেত্রর পরিকল্পনা মাথায় , শেষ বুকে ,
ইদানীং ভ্রাতৃহন্তক রক্তে রঞ্জিত হস্তিনাপুর ,

এবং এখন তিনি ধরাছোঁয়ার বাইরে , কবীর'কে মন্ত্র শেখাচ্ছেন
লালন'কে দেহতত্ত্ব ,
আর প্রতিটি অমাবস্যায় রাতে এদের উদিত হতে বলেন -

বছরে একবার বিশেষ পূর্ণিমা আসে ,
চাঁদ গাই প্রার্থনা সঙ্গীত ,
অলৌকিক এই জ্যোৎস্নায় যিশু মহম্মদ তথাগত পাশাপাশি
আগুনের গল্প লেখে ----

এতকিছু সমস্তই সঙ্গোপনে ,
সে বাঁশি তুলে নিলে পশুরাও হয়ে ওঠে মানবিক সম্পদ !





শূন্য 


একটা জন্ম দাও ; ফড়িঙের জন্ম দাও ।
পাটকাঠির আগাই জিব্লি আঠায় নিবদ্ধ থেকে
ডানা ঝাপটিয়ে জানান দেবো ঈশ্বরে, আমি বাঁচতে চাই ,
অথবা মৃত্যু হ'লেও জেনে জাবেন
বাঁচার নিমন্ত্রণ রাখতে হয় মরণের কাছে ।

অভাবনীয় সংলাপ এসেছে যুগে যুগে , নিমিত্ত মরণের

উপেক্ষার ভাষা শিখিয়েছেন দ্বিজ ;
সাপের ব্যাঙ শিকারের সত্যটা প্রসিদ্ধ যতখানি ততখানি
দ্রোহের আড়তে মালিকের আড়তদারী
এবং কৃপণ হতে হতে তার হাত - আমার ক্ষুধার সাম্রাজ্য ।

সমস্ত ভবিতব্য আহ্নিকগতি ঘূর্ণন
ভোগের সম্মুখে চিরায়ত যাতায়াত সভ্যতার , সময়ের
উভয়পীঠেই নাম লেখা যন্ত্রণার
বহুদিন পড়ে থেকে সুঁড়িখানায় নেশা জমলো না

মৃতবৎ যদি সমস্ত জঠর , কল্পিত পুরুষ মানেই ঈশ্বর ?




আজকের সুজাতা 


পায়াসন্ন , শুকনো মুখের সামনে ধরে সুজাতা ,
সকাল আট পাঁচের বনগাঁ লোকাল জনরোল হরিবোল
স্কুল দিদিমনির পারফিউম উগ্রতা শুঁটকী মাছের বোটকা গন্ধ-
সুজাতা আঁচল ঠিক করে -
রাতের কাঁটা দাগ লুকানোর সলজ্জ প্রচেষ্টা !

ত্রস্ত চোখে নেমে পড়ে গন্তব্যে , ফিরতি পথে আলু- বেগুনে
লোটে মাছে ভ'রে ওঠে ব্যাগ , তিনতে পেয়ারা দু'টো সবেদা 

হরলিক্স এক কৌটা পয়েন্ট ফাইভ মেলোপ্রাস
কর্কট মেলেছে পাখনা মরদের উড়তে কতক্ষণ !

মীনাবাজারের দায়নেই - কিন্তু দায়িত্ব অনেক , আমাদের শখে
সুজাতা বাঁচে ,রোজ পায়াসন্ন রান্না হয়
বোধিবৃক্ষের নিচে তার সংসার -
আর মৃত্যু পথযাত্রী স্বামী শরণাগত ভঙ্গিমায় রাত্রির প্রহর গোনে
প্রতিটি প্রহরে সুজাতা কেঁপে ওঠে
বেঁচে থাকা যন্ত্রণার নামান্তর বুঝি গিয়ে মেলোপ্রাসে ঢাকে আক্ষেপ !

এভাবে , সুজাতা বাঁচে বুদ্ধকে পায়েস খাওয়াবেন বলে ।
মৃত্যুর শেষ অভিমানে অথর্ব স্বামী ---
সুজাতা'কে মা বলেই মানেন -- আমরা ডেকেছি রাতপরী





কার্নিশে 


অনেক বাঁচা হোল কার্নিশে সূর্যের সম্মুখে ।
অথচ আমি আর বৃক্ষ নই তুমিও পক্ষীমাতা নও যে
দু'জনাই পৌষে ঢলে পড়া পশ্চিমের রোদ পোহাবো !

আমিও বেঁচে দেখলাম , তুমিও ডিম তাওয়ালে আমার
ক্ষুদ্র ছায়াই হলুদ কুসুম ভেঙ্গে তোমার বাচ্চা এলো --
নরম ঠোঁটে ঠুকে কাণ্ড শাখাপ্রশাখা তোমার ঠোঁট চুমে
সেই যে আসছি বলে পশ্চিম আকাশে দেশন্তরী হল দেখে 

তুমি কেমন চুপচাপ হয়ে গ্যালে - আমি নিঃস্ব

আমিও যুবক থেকে বৃদ্ধ হলাম বিবর্ণ পালকে বুঝলাম
তোমারও বয়স হয়েছে আমারই মতন ;
আশ্চর্য , কার্নিশের রঙ মুছতে- না মুছতে আমরা বুড়ো --

তোমার সন্তান পশ্চিম থেকে আর ফেরেনি , সেও বোধহয়
কোন কার্নিশে সংসার পেতেছে --- তারও সন্তান চুমু খেতে খেতে
শেকড় ভেঙ্গেছে --

এবার , আমি তুমি দু'জনই হারিয়ে যাবো ---
তুমি গম খেতে কীটনাশকে , আমি জঞ্জালের গাড়িতে -
পূর্ণজন্মের দিকেই বারবার প্রতিবার আমরা দু'জন








উত্তর পুরুষ 


তবে , মুছে যাক জলীয় বায়বীয় শরীর ,
তৃপ্তি দূরে থাক , জয়স্তম্ভ ভাষ্য লিখে রাখে--
নিগাহ সিনে মে কাম পাঠ করে , চাপরাশির যন্ত্রণা
শরবিদ্ধ পিতামহের ইচ্ছাপূরণ মৃত্যুয় অনুকরণে
দগ্ধ দিয়ে গেলে পড়ে থাকে ইচ্ছা-অনিচ্ছাধীনের ষড়রিপু !

দীঘল চক্ষ থেকে দূরে ঢেউ আর তরণীর বৈঠার ছলাৎ ছলাৎ
শব্দের আহ্বানে মেঘ ঝঞ্ঝা বাতাসের সুতীব্র 

চেতনার সুবিশাল প্রস্তাব আসে , রক্ত ঝরানো ফুলের
যন্ত্রণা কত বেশী আনন্দ দেবে প্রথম রতি সোহাগের চেয়ে ?

সব জয়স্তম্ভ পাঠিত হ'বে ভাষা বুঝে নেবার পড়ে
সব জ্বালাময় অনুক্ষণ দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব রেখে যাবে উত্তরপুরুষে ।




বিচ্ছেদ 


শতাব্দী প্রাচীন কিম্বা তার ঊর্ধ্বে থেকেই ব্যাপারটা ঘটছে ।
তুমি পিতৃগৃহে গ্যালে কিম্বা পোয়াতি কালে
আমার ভেতর একটা পশুকে দেখতে পাই , আশ্চর্য
ঠিক আমারই মত ! অনেক , অনেকদিন ধরে আছে
অথচ চরম একাকীত্ব মুহূর্ত গুলোকে ঠিক তাকে খুঁজে পাই

সে পশু আমাকেই বাহন করে আর সর্বাধিক উষ্ণতার পক্ষালম্বি ,
পারতপক্ষে অভয়ারণ্যের হরিন এবং অন্যান্য 

শিকার শরীর থেকে দূরে রাখি ঘটমান বর্তমান বোধে ,
সে লাল ফেলে রোজ রাতে , বলি থাম, থাম ক্ষণকাল-
কুলমান যে এবার যাই ------

এসব প্রাকাশ্যে আনি না , কিছু নিজস্ব জারিজুরি থাকে
অপ্রকাশ্যের অন্দরে , যদি একবার বেড়িয়ে আসে পশু প্রকাশ্যে - আর
বউ এর যদি একটা স্তনের উপর মাথা থাকে
জাজেস কোর্টে লেখা হয় বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা ! 







অকাতর 


অকাতর ছড়িয়ে মন্ত্রপূত অহমধ্বনি ,
ওম অবিনশ্বর , জাতক কাহিনী বিক্রমাদিত্য-বেতাল
রেসকোর্সের ঘোড়া জানে না , জুয়া বোর্ডে
তাকিয়েই তার যাবতীয় লম্ফ-ঝম্ফ

কিছুই কি বুঝি ছাই ? পৈতার নবগুণ , নবরত্ন
কাকে বলে ? ধুনুচী নাচের মহাত্ত এবং
সধবার একাদশী কিসের প্রয়োজনে ?


এখনকার আঙ্গিক এবং পেক্ষাপট নিয়ে ফোড়ে কারবার
মাসকলাই এ ইঁদুরের মাটি , লাভ্যাংশ জানি ;

অথচ , উপেক্ষার ভাষা বুঝি , পিত্তক্ষরণ বুঝি
বেশ্যা-রাত বুঝি , সূচের জ্বলন বুঝি

কে যেন , আত্মসন্তুষ্টিতে এই শরীর দিয়ে বলেছিলেন
ধূপের গন্ধ নয় প্রচ্ছাপের কীটে তোর
অঙ্গলীন একদিন নরকের আগেই




মহুয়ে 


ইদানীং তোমাকে ছোবার ইচ্ছাটা দেবোত্তর সম্পত্তি
আগ্রাসনের মত বাড়ছে , এসব বললেই দাঁতহীন
ঠাকুমা বিয়ের প্রস্তাব এলে যেমন হাসেন অবিকল
তেমন হেসে উঠবে , আমিও মাজা পোকা'ই যে ধান
নষ্ট ক'রে কৃষি বিশেষজ্ঞের মত বোঝাতে চাইলে তুমি
কৃষকের মত মাথা নেড়ে বলবে রাখুন এসব --

প্রত্যেক বলিষ্ঠ পুরুষই বোধহয় কোথাও ঘি এর

মত গলে যেতে চাই - মমতায় কিম্বা উত্তাপে
আর প্রজন্ম ধরে কেঁচোর অন্ধ অনুকরণে
ঢুকে যেতে চাই নারীর অন্দরে ; নাহ , এসব বলিনা
তোমাকে , শ্যাওড়া গাছের পেতবুড়ি ভয়ই দ্যাখাই না শুধু
কাকে প্রেম বলে কাকে বলে মায়া মনে রেখেছে পূর্বজন্মের ।

সমগ্র পুরুষালী অভিশাপ নিয়ে দৃষ্টিফেলি লাবণ্যের সৃষ্টিতে
তুমি গর্হিত কাজ ভাবো , আমি দৃষ্টিতে সুখ লিখি , মহুয়া হেমব্রুম ।







জাতক 


আলট্রাসোনোগ্রাফি , কড়করে একটা গাধীমূর্তি দু'খানা
সবুজপাত্তি , আয়রন ট্যাবলেট মাতৃসদনের বনেদী ফিরিস্তি --

অদ্ভুত রোগ এসেছে । এ নগর থেকে গঞ্জ-গাঁ --
চৈত্র সেলের ভিড় মাড়িয়ে ঘরে ফেরার ডাক ,
সে আসছে , তেত্রিশ কোটি দেবদেবী সাক্ষী
আমার রক্ত-ঘাম অজাতশত্রু , আমার উত্তরাধিকার
সূত্রে প্রাপ্য সমগ্র ঐতিহ্য নিয়েই সে আসছে ,

যদি হই আমি তার পিতা , আমি পিতা , আমার
শুক্রাণুতেই তার উৎপত্তি আমার রক্তেই তার বিলুপ্ত ,
লিখেছি আমি , আমি জন্মদাতা , আমি ঈশ্বর , সর্বেশ্বর ।

১৯০ টাকায় প্রতিদিন রোজগারে ঢের শক্তি ধরে , শক্তি
থাকবেই তাতে , আমার ঘাম , আমার অনুভব ঝরিয়ে এসেছে টাকা -
প্রতিটি গাঁথুনি ইটে তার পরম ছোঁয়াই পেয়েছি --

না , না , এভাবে হারবে না আমার শিল্প , আমি শিল্পী
বারবার আমি মরি , বারবার মরতে মরতে জীবনের কথা বলি ।



প্রলাপে এসো

নিপাট প্রলাপ এসো , ভুল প্রলাপে যাপন লিখি -
ধুম জ্বরে কেঁপে উঠলে বুক , এসো প্রলাপ ।
যদি সে আসে , আহা , কনকচাঁপা গন্ধে -
আত্মা বেহমিয়ান ! হংসীনি পালকে সূর্যারঙ মেখে আসে-
যদি সে , শ্বেতশুভ্র মৃন্ময়ী , দেবী , দেবী আমার --
অমরাবতী'র নাগরিকের মত বলিষ্ঠ কিন্তু মৃদু
ঐশ্বরিক স্বরে " কেমন আছিস ? "

তবে কি এত দিন মনে পড়ে নি ? প্রলাপ বুঝি মায়া চেনে ?
এভাবেই বুঝি আসতে হয় বিপদে ?
এভাবেই বুঝি অন্ধকার ভাঙ্গে সন্ধ্যারতি ? এভাবেই
বাখারির ফোঁকর থেকে অন্ধকারে চামচিকে উড়ে গিয়ে
খবর দিয়ে আসে তারে ?

যদি মরে যাবো হঠাৎ - তর্কাতিত সত্য ,
যদি পেত হয়ে যাবো , এই বিশ্বাস সর্বাঙ্গে , একবার , আর একবার
তোমার পদযুগলে কেঁপে উঠুক ঘর
তোমার রাঙ্গা ওষ্ঠে - আমার কপালে শুরু হোক শেষ
উষ্ণ উৎসব --

অথবা , মরণের আগে এই প্রলাপেই রেখো -- প্রতিটি
রাত্রি আমি তুমি আর আমাদের সন্ধি বিচ্ছেদ








বিষ রেখেছিলে উজার পাত্রে তবু মৃত্যু আসেনি ;
অন্ধের যষ্টি'র মত ভুল পথে ঠোকর খেতে খেতে
বয়স মেপেনিই ,
এ শহর এখনও যুবক হয়নি - যে
কাজের মানপত্র হাতে দিয়ে বলবে , " তুই কবিতা লেখ "
দুই 



০২ ফ্যালফ্যাল চোখের অভ্যন্তরে স্বপ্ন আর খিদের আগমন ,
জানি , একদিন পরিস্রুত জলেও 

ব্যাঙ্গাচি মেলবে ধর্মের গান
লীন হ'বে তীর্থ যাত্রা যাত্রিকের চেতনে
কে দেখাবে পথ --
শিশুর মুখে কে তুলে দেবে ভাত ?




বাই ফোকাল
চলো , তবে মেলপাসের ঘ্রাণ মাখামাখি হোক
নাভিতে , পাইন ফার্নে সূর্য খুলেছে গলা হবে দেহাতী
সঙ্গীত , নতিদূরে বাইসনের পায়ে ডুবে গেলে
গোধূলির আবহসঙ্গীত -- আঁধারের
তরঙ্গে চুরমার বনস্থলী ;
রাগান্বিত ভঙ্গিমায় পঞ্চমীর চাঁদর , হুটোপুটি তৃষ্ণায়
নদীর ধারে উগ্র কেশররাজ ক্ষুদ্র হরিণী
বুনো গন্ধ ---- 

তোমার এলানো খোঁপার বন্ধন ভিন্ন ভঙ্গিমায়
ঈশারার ভাষাতে বুঝে নাও রাতের মুদ্রা ,
অপার বিস্ময়ে লাফাতে লাফাতে তারারা করে দেবে পথ
শিরশির বাতাস পশু কোলাহল
এসো , এসো প্রেম চিনে নি , কবেকার অন্ধকার ।

মন্ত্রমুগ্ধ চাঁদের আড়ম্বরে দু'জনাই পরাজিত হয়েছি ,
আরাধ্য দেবতার সুগন্ধে কলকাতা ঢেকে গেলে তোমার কাছে --
আসে শারদীয়া মহিমান্বিত রঙ , যা তুমি চেন
মথ ফার্ন টিয়ার পালকের মত
আমি নর্দমা বুঝি ;টিনের ফুটো ভেদ করে বৃষ্টির রূপান্তর
বুঝি ভেজা খাটের প্রচ্ছদে ,

সব থাক আজ , গাছের পশুর জলের প্রকৃতিতে এসো ;
বাইফোকালে যে রঙ খেলে আকাশে সেটুকু শুধুই ধন্দ ,
অত্যাশ্চর্য রঙ জীবনের সপ্তসুর জেগে থেকে তোমার
গোপন তরবারি অগ্রে তোমাকেই ধ্বংসের মহিমায় !












দশ ০৫


এর নাম 


অরণ্য ভাষা জানে কথা লেখে বহুমাত্রিক ,
অথচ , ম্লানতর হ'লে তোমার মুখ
চৌকাঠের এই পাশে রাঙে বসন্ত ,ফাগুণ অভাবনীয়
যুবক দিন রাখে , কল্পনাতীত যে সখ্য ছিল অন্তরের সাথে
অন্তরের তারা ব্যথা পাই ,
হরিণীও বধ্যভূমিতে প্রভূত জন্ম দিয়ে মরণের আগে ক'রে
সৃষ্টিকে সমৃদ্ধ ; তারা মৃত্যু জেনেও কচি ঘাসে মুখ রাখে
জন্মের মধ্যে মৃত্যু দাগ দেখেও 

বাঘ-হরিণী এক ঘাটে জল পান - একই ভূমি ক্রিয়াভূমি ।

মেয়ে , তটভূমিতে দাঁড়িয়ে থেকে দ্যাখো জোয়ারে ঢেউ পা
ছুঁয়ে যাই শিরশির অনুভব এই টুকুই তুমি মেয়ে
ভাঁটি ঢেউ সরে গেলে পায়ের নিচে বালি ,জলশূন্য আদিম
হাহাকার - পুনরায় জল ছোঁয়ার ইচ্ছাকে বলে মেয়ে বেলা !

কাদের ভাষা শেখাবে তুমি ? ভালোবাসা দিতে পারো জানি
গ্রহনের সক্ষমতার সেই হাত কৈ ?
যে হাত বলীপ্রদত্ত যূপকাঠেও চিৎকার ক'রে বলতে পারে
মৃত্যুতে ভয় নেই , ভয় শুধু তাকে হারিয়ে যেতে হ'বে  এই বেলাই 




জলদেবি


প্রগাঢ় দেবী , জলের ভেতর
প্রতুল নির্বাক মোড় , শোধিত বারি , ওখানে
মৎস্য কন্যা রেখে বানজারা চন্দ্রিমায় স্বচ্ছ জলের ফলকে
কি সৃষ্টি লেখো তুমি , অদ্ভুত ?

কৃপণ শাখাহীন বৃক্ষরা ভাষা জানে ,
জলের সর্বত্তম উপযোগী ব্যবহারের অনুমতি পেয়ে শেকড়
প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিলে হৃদয়ে মহাকালের হরি ধ্বনি 

নৈশব্দে বাতাসের স্নিগ্ধ বিপ্ললে নবমুখ !

প্রগাঢ় দেবী , তোমার গঠিত শত সহস্র অযুত কোটি
জলপোকা কীর্তিমান পললের অভ্যন্তরে
প্রাজন্মিক ফসিলস শুভ্র মুক্তা'র তাপে -অনুতাপে
বিস্তীর্ণ আমার অহংকৃত জগতে
নিত্য শোকের আসর , অনাদায়ী খাজনার মত
পড়ে আছি সুদ বাড়িয়ে কিসের অভিলাষে ?

দেবী , সমস্ত ঈশ্বরীকন্যা , দানপত্র তুলে ধরো অভুক্ত হৃদয়ে ,
মৃত্যুর ঐতিহ্যে ছায়া প্রেম হয়ে থেকে , বলো ,
কোন সাতরাজার ধন আছে যে যক্ষীর
বুকে লীন হ'বো একদিন ?







এক পুরুষের জীবন 


কারসেডে ফিরতি আপ ট্রেন দশ ঘণ্টা বিশ্রাম নেয় --
ঠিক ঘড়ির কাটা মিলিয়ে সোয়া এগারোটাই কিছু
পঙ্গপাল জি আর পি ফাঁকি দিয়ে ঢুকে যাই ট্রেনখোলে ।
ছোট্ট যে সাত মাসের তার ওপরেরটা দুই, সাড়ে তিন বছর
নিয়ে জনা চারের গোছানো সংসার ।
বেগুন পোড়ে , আগুনে পড়ে শুকনো লংকা , হাঁচি
ওঠে , কিলবিল করতে করতে ছোট শিশু "মাই" খোঁজে ।
এ শহর আমার , ওহে আমার । দিয়েছে গগনচুম্বী 

সোসাইটি কালো রাস্তা গঙ্গাগল , ওহে দিয়েছে ডেঙ্গি ।

ধুম জ্বর মায়ের । আজকের পূর্ণিমা- জ্বরে ছারখার করে
দিচ্ছে মায়ের শরীর , অসীম অঞ্চল থেকে এসেছে জন্ম , বাপ --
আহা , নধর নবদূর্বাদল শ্যাম , আঁধারে এসে আঁধারেই
লুকিয়ে আছে কোন আঁধারে !

ঘন ঘন ফ্ল্যাশ ব্যাক , ব্যাক ব্রাশ চুলে , অহিং অহিং লেডী
সাংবাদিক , ব্রেকিং নিউজ -----
শহরের হার্ট থ্রব " কলকাতাবাসি , রাতে মশারী টানিয়ে
ঘুমবেন , স্টোন ম্যানের থেকেও ভয়ঙ্কর মশা "

ব্রেকিং নিউজের ছবিতে দেখছি -- ছোট্ট শিশুর ঠোঁট মায়ের
স্তনে , ক্যামেরার ফ্ল্যাশের দিকে চেয়ে আছে দুই মেয়ে ---





থার্ড ল

অতঃপর কোষ মৃত ঘোষণা করলেন ডাক্তার ।
আগে --

বীভৎস ক্ষিপ্ততাই খোল তৃতীয় দ্বার প্রবেশের অধিকারে --
উজ্জীবন আঙুল যেন পঞ্চরত্ন
ভুখ চেনে , নিঃশব্দ , বিপ বিপ যেন হাজার হাঁফর
ক্রমান্বয়ে আগুন উশকে দেয় কারিগর 

অপ্রতিসম ভাঁজ , টানটান শিরদাঁড়া জলে ভেজা কাক স্থির
মৃদু ডানা ঝাপটানি
নিস্তব্ধ রাত্রি লিখছে নিষিক্তকলা , সমস্ত সন্তুষ্টি- অসন্তুষ্টি
প্রাচীনপন্থী ভাবাবেগ
থেঁতলে বাই দ্যা ওয়ে অন ওয়ে তে এসো , নেশাগ্রস্থ শরীর
রাস্তা চাই , রাস্তা ---
বিষ ঢালা পথ চাই , তর্জনী উচিও না , মোহ শেখ
অতলে নামো -- আসন , টাটকা আসন আমদানিকৃত
ব্ল্যাকবেরি'র রসনায় ,
হুইপ দিয়েছি , হুইপ
বাই দ্যা বাই, শোন , আর্তনাদ ছাড়ো , চরাও হও
প্রতিক্রিয়া দাও , তৃতীয় ল এর প্রতিক্রিয়া
ইউ মাস্ট বি এঞ্জয় , আম সিওর
ওঠো , ওঠো সিলি গার্ল , নেভার কাম এগেইন , এই মুগ্ধতা

হিপি সরিয়েছে , জ্বালাতন , লকলকে জিভের ক্ষরণে
দ্রবীভূত হও ----
সুগভীর মুদ্রাভুতে লীন হও, বিমূঢ় সনাতনী প্রবাদ খুলে দ্যাখো
আধুনিক খেলছে বুকে --

মিটিয়ে দাও , মিটিয়ে দাও জন্মদাগ , ক্রিয়া দিয়েছি - প্রতিক্রিয়া দাও ।







শেষ 


একটা অনির্বাণ আগুন রেখেছি ,
সেখানে এসে পুড়ে যায় গার্হস্থ শ্রম , ম্লানতর
চোখে চতুর্দশী জাগে , ভাবলেশহীন কবিতা জন্মে ,
আপাতসিদ্ধ ভঙ্গিমায় পথ ভাঙ্গে ---
জনরোল ক্যাফে থেকে থেমে গেলে পড়ে থাকে
দীর্ঘশ্বাস পিন ড্রপ সাইলেন্স
অডিয়েঞ্চ নাটক দ্যাখে অভিনেত্রির অন্ধকার নয় !

অব্যর্থ হিসাব লিখে রাখে ভাড়াটিয়া কড়ায়গণ্ডায় ,
কানাকড়ি অমূল্য সো-পিস শোভাবর্ধক ,
বিরহ সঙ্গীত থেকে সুর বাজে অন্তঃকর্ণে - যদি
কুহক , কুহক মায়া , শব্দ পোকা কিলবিল , বলি
থাম , ঢের রাত আছে কালো --
ক্ষিদে আছে , ক্ষিদে থাকে ,
ফুসফুসে জমে আছে অন্ধ প্রত্যয় ।

অন্যথায় দারিদ্রে শিল্প নাচন ,পিত্ত গলে গলে
চোঁয়া ঢেঁকুর্ , তলপেটে চিনচিনে ব্যথা , জল সাথি --
সে জানে সত্য সমুজ্জ্বল
কবিতার সুমহান ঐতিহ্য , লিখেছেন কত ক্ষুধাতুর প্যাঁচা
রাত জেগে ,পেটের পোষণের অপরাগে দেশ ।

পরিষ্কার হবে একদিন সম্মুখ দৃশ্য কুক্ষিগত বাস্তিল সম্রাট , দুর্গ ,
যক্ষ্মাতে নাম থাকবে সম্রাট "নিরো'র " যক্ষীর ধনের ভাগ
অপরাহ্ণময় শৃঙ্খল গোধূলি দেবেন সকল সন্তান'কে ---

এই কবি একদিন , সেবার স্বাধীন --
এই অক্ষরের পূর্ণতা পাবে অষ্টমগর্ভ জাতকের শাসনে -
সেবার কবিতাও স্বাধীন











বন্ধুগন

আসার ব্যাপারে হাত ছিল না , জেনে রাখুন বন্ধুগণ ।

যাবার বেলাই সব লিখে যাবো , প্রহসন , যবনিকা
পতনের দৃশ্য আঁকা হবে ---
যতবার মানচিত্র থেকে হাঙর বেড়িয়ে এসে বলবে "খেতে দাও
নইলে মা'কেও খাবো " ,
সপ্তসিন্ধু থেকে সুদর্শনা মৎস্যকন্যার শীৎকার শব্দ
ভোগের ব্যাঞ্জনে তৃপ্তির গন্ধ উঠে এলে
শিশু যদি বলেন " ভাই কৈ ? " -----
আমি শ্যালা দেখিয়ে দেবো দেশ , খা , খা , চেটেপুটে খেয়েনে ,
নাগরিক হতে গেলে দেশ খাওয়া শিখেনে

বন্ধুগণ , এত্ত সহজে যাচ্ছি না । আবহমান রক্ষিতা জন্ম
ভোগের কাছে , ইজ্জৎ ইজেরের নিচে নয়
শরীরের ঊর্ধ্বপ্রদেশে , সেখানেই বেশ্যা জন্ম , সেখানেই
দালাল ভোগী লম্পট
সমগ্র পৃথিবী খেতে খেতে আমার শরীরে এসে থামে --
মনে ভাবি রক্ষা পেয়ে গেছি
দেখি কিছু হাড় আছে সঙ্গবদ্ধ - বাদবাকি গেছে তাদের পেটে ।

যাবো না , আগে মহাকালেরে সীমাহীন ক্রোধে আগে পুড়ুক সমস্ত
বাস্তবতা , আমিও যেতে প্রস্তুত আছি ।


অংক মিল্লে দেবির জন্ম হয়

আপনি দিনে আট ঘণ্টা কাজ করেন ।
আপনার দিনে রোজগার দু'শত টাকা ,
এক কিলো চালের দাম ত্রিশ টাকা,
এক কিলো চাল রান্না হচ্ছে আনুসাঙ্গিক কিছু দিয়ে
মোট খরচ একশতটাকা ধরুন ,
বৌকে একটা নেলপলিস কিনে দিলেন , দাম পনের টাকা ,
পনের টাকা ব্যায়ে একটা দৃশ্যসুখ কিনলেন , তাইতো ?
সন্তান স্কুলে পাঠালেন দশ টাকা , বিড়ি দেশলাই পাঁচ টাকা ,

মায়ের পান-তামাক দশটাকা , ছোট মেয়ের কাশির সিরাপ
চল্লিশটাকা , বাড়িভাড়ার জন্য রাখলেন প্রতিদিন কুরিটাকা
আপনার দু'শত টাকা শেষ ! ভাল খবর ----

আপনার আজকে জ্বর এসেছে , কাজে যেতে পারেননি --
মানে দু'শত টাকা ঘাটতি বাজেট
দু'দিন কাজে যেতে পারেননি চারশত টাকা ঘাটতি ।

বউ সারাদিন কাঁদেন , সন্তানমুখ শুকনো ।
বলুন , জীবন মরবে ?

অতঃএব গৃহবধু , রাস্তা চেনেন না , অন্ধকারে ডুবে গিয়ে
সকালে ভাত নিয়ে ফেরেন









দশ ০৬


বাল্মীকি স্তুপ 


জানো না ? সে শব্দ শোননি ? নিদারুণ প্রলাপ
ভেঙ্গে অট্টহাসি নারীঘাতী পিশাচ দাও দাও অপূর্ব
গহ্বর টুকু দাও , সংবেদনশীল অঞ্চল দাও , কালো
জঙ্ঘা থেকে রক্ত দাগ মুছে দিয়ে পুনরায় দাঁড়িয়ে
কেরোসিন লাইনে - বলো ১৫ আগস্ট আমার , এই
দেশের প্রতিটি
ধুলো কণা আমার আমার আমার ।

এজলাশে এ কথা উঠবে যখন ফরিয়াদি কণ্ঠে মরা বান ,

ভাষার জটিল আবর্তে পড়ে অপরাধ বেকসুর খালাস ,
অসহয় ক্ষত চিহ্ন নিয়ে আমি চেতলা থেকে বলছি , আমি
পার্ক স্ট্রীট , আমি মালদা , শুনছেন , শুনছেন ধর্মাবতর --

চরাচরব্যাপী উত্থান- পতনের আয়ু রেখা ধরে অগুন্তি
স্বপ্নের দেশ ছিল স্বদেশ , ধমনীতে চেতনার মূলমন্ত্র উড়েছিল
গঙ্গা পাড়ে এই তো সেদিন , আর মাঠে মাঠে মশাল অথবা
খোলা আগুনে নেচেছিল নবান্ন রাত --
আজ দ্যাখো আগুনে পুড়ছে ইতিহাস , পুড়ছে বাল্মীকি স্তুপ ।





মর্মোদ্ধার 


ভাদুরে চড়া রোদে আম কাঁঠালের শূন্যপ্রাণে
প্রবর্তিত সেই পুরাতনী চোরা পথে তোমার
হৃদয় ছোঁয়ার বাসনা গেল না , বিদেহী আত্মা
কি চাও তুমি ? অনন্ত পাখি-পাখালি সবুজ ফসলের
গুচ্ছে কোন মায়া রেখে গেছে সে ?
শুধু , মায়া রেখে যায় এখানে , ড্রেসিং টেবিল চুলের ফিতে
বেলজিয়াম কাঁচে এই নিশুতি রাতে কার ছায়া ভাসে ?
কে রেখে যায় রক্তের অনুভূতিতে স্নেহাতুর সন্তান 

আলমারি ভাজে গোছানো সাড়ি ন্যাপথলিনের
সে সব গন্ধ কোন রাতের কথা বলে , প্রেম ?

সময়ের গ্রন্থিতে নেশা দিয়ে গেছো , সময়ের উত্তাপে
রেখে গিয়ে তোমার শরীর কোথায় হয়েছ আজ অন্তঃলীন
জাহ্নবী ?

এভাবেই গলে যায় একবার ছ্যাদে সুচের অভ্যন্তরে সুতো
আর মায়াবী ক্ষিপতাই জুড়ে দিয়ে নকশী কাঁথা
সময়ের কোন সে শীতের প্রতিদ্বন্দ্বী ?
কত কিছু ফিরে আসে রি-সাইকেলে ---
রাতপরী হোক ঠাকুমার রাজকুমারী --
এই জীবনে শুধু হারানো , শুধু খুঁজে ফেরা --
এই জীবনে পেয়েও পাওয়া হোল তোমার করুণাধারা !








পাগ্লি 


জাহাজ মাস্তুল ফ্যান্টাসি , চেনে সফেন
রূপটান রোদ্দুর মহিসোফানের ওধারে নারকেল সারি ।
অকৃত্রিম পাল চেনে হাওয়ার পরিচলন
কম্পাসে লেগে থাকে বিস্ময়
ভূমিরূপ নগ্ন পা ঈশ্বরভূমি অকৃপণ হাতে ডাকে
সাহসী নাবিককে ।

সহসা নিলাম ঘরে বাতি জ্বলে ,

স্যাঁতসেঁতে ডেরা থেকে বনজ শার্দূল
রক্ত লালসায় লালা ঝরিয়ে হুঙ্কার , মশলা দ্বীপ চাই
নারী চাই , দাস চাই ক্রীতদাস , যেন হয় তেমনি আদিম
রোমান গ্লাডিয়েটর ।

সেন্ট ক্যাথিড্রাল গির্জার পাদ্রী
সাতান্ন বছরের সেন্ট লুইস কনফেস রুমে ডুকরে ওঠে
' প্রভু , কারা যেন কিনছে পৃথিবী , জলের দরে ,
আমিও যদি শরিক হই বেনিয়ার , তাদের অনুশাসনে
গড়ে ওঠে তোমার ঘর , তোমাকে পাবো কি সেথায় ? '

কালিকটে জাহাজঘাটে নোঙর পড়ে , এক পৃথিবী বন্দী হোল
নোঙ্গরঘাটাই , অতলান্তিকে আগে ডোবে সূর্য ।





মহুয়া 


দৃশ্যর মধ্যেই অদৃশ্য হয়ে আছো , যেমন
কূলের জলের মধ্যে লুকিয়ে ঢেউ এর শক্তিমানতা ।
কাঁচের চুড়ি হোক নোলকে , বিনুনি চুলে হোক
রঙিন ওষ্ঠে , কোমর বন্ধনীময় সোনালী বিছাহার ,
যতটুকু দেখি তোমায় তার চেয়ে বেশী আছো
রাঙ্গামাটি ধূলায় মহুয়া পলাশে নির্জন দুপুরে
ছেলে খাওয়ানো স্তনে ।

যারা দুধ ফুটিয়ে ঘি খেতে শিখেছে হাত চেটে ,
তোমার ভাস্কর্যর দিকে সর্বাধিক মাছরাঙ্গা উদাসী বিকালে
ছোঁ -মারার প্রতীক্ষায় ,
কোন শূন্য পথে ফেলে যাও তুমি মরালী গ্রীবা , তার
নিচের উষ্ণ মাংসের গন্ধ ছড়িয়ে ছুটে যেতে যেতে
ভেবে দ্যাখনি যা চোখের লাবণ্যে আছে নেশাতেও
আছে সক্রিয় মানবের ।

আনাদের সমস্ত বীরত্বের অরণ্যে , এই ব্যাধের জন্মে ,
তীক্ষ্ণ তৃণে রক্ত লেগে থাকে হৃদস্পন্দন একটুকুও নয় !




সেনা


তারপর , আরব্য ঘোড়ায় চেপে ছোট ছোট দলে
বিভক্ত হয়ে 'সপ্তসিন্ধু' পদানত তরবারি অশ্ম খুড়ে ।

এই ঘটনা প্রবাহ থেকে আজ পর্যন্ত আমি শৃঙ্খলিত ,
শতাব্দীর আকাশে শুধুই পরাজয়ের গ্লানি , সভ্যতা
নিমগ্ন চিত্তে অজস্র শ্রেণী বিন্যাসের ধব্জা তুলে
লিখে গেছেন সূর্যচোরের ইতিহাস ! 


প্রতিবার ইতিহাস দাগ রেখে গেছে হৃদয়ে রক্ত আঁকড়ে ,
আর শতাব্দী শতাব্দী পুরাতন দুর্গ থেকে সূর্য রঙ মেখে
সন্তর্পণে সে সাহসী বীর সেনা সিংনাদে যাচ্ছে রণাঙ্গনে
বুকে তাদের পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন পেরুনো
নেশা , গাঢ় ঘূর্ণাবাত মুছে দিয়েছে যে সমস্ত পথ
এই শাসন উপড়ানো বুক তচনচ করে দিয়ে প্রলয় রাত্রি
সামনে রেখেছে শুধুই সূর্যের গতিপথ ।

আজ ভেঙ্গে যাবে সমস্ত বিজয়ী রথের চাকা , গুপ্ত ঘাতকের
চক্রান্ত ভেদ করে সমগ্র আর্যাবতে শালীনতার ভোর ।
আমি দেখছি , দেখছি শতাব্দীর বিজয়ী ফলকে শ্যাওলা তুলে
শহিদের নাম নবীকরণ পর্ব , সমস্ত প্রত্যয়ী সেনাদল
লুকানো কৃপাণ খুলে আগাছা উপ্রে খুলছে নতুন পথ ।

এত দেরী কেন সেনাপতি ? সূর্যের হাঁকডাকে শোন আজ
সে সবই প্রত্যাশা যা আমি বুকে নিয়ে আছি হাজার বছর ।
ফেরো , তাড়াতাড়ি কাজ করে ফিরে এসো পাখির প্রান্তরে ,
নিষিদ্ধ কালো রাত্রি অপলকে চেয়ে থাকুক তোমরা ঘরে
ফিরছ বলে ,
এবার প্রকাশ্যে আনো চক্রান্তের সমস্ত অধ্যায় , চরম মূল্য
চুকিয়ে হিসাব বরাবর করো সভ্যতার ইতিহাস ----

সমাধি গড়ার আগে চোখে রাখো মুগ্ধতারাশি ।









পাপ

এক এক ঘরে খুলে পড়ে অঙ্গভূষণ , দেহপল্লবী
রুপালী আঁশের মত বিনম্র , দৃশ্য যখন খুলে রাখছিলে
দেরাজে আলমারি ড্রেসিং টেবিলে , কাঁচুমাচু মুখে
গির্জা ঘড়ি ঢংঢং - বুঝি বারোটা বেজে গেছে ।
হঠাৎ আলো নিভে গেলে আঁধার যেন এক পেত
শরীর পেতে চাই তুমুল আক্রোশে , অভূতপূর্ণ ক্ষিপ্ততাই
পেত খেলে যাই অনাবৃত শরীরের আনাচে-কানাচে --

নির্বাক টিউব লাইট আঁধারের কাব্যে মাতোয়ারা , এ মাতম
তীব্র থেকে তীব্রতম হলে ------
টিউব হেসে ওঠে , সমস্ত বীজই কি তবে অন্ধকারে এসে
আলোতে পেয়েছে পূর্ণতা !

পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষার ঘোলা জলে যে সমস্ত বীজ বপন ক'রে
দ্বৈতসত্তা দীর্ঘতম দীর্ঘশ্বাস অতিক্রম ক'রে ,
এই রকম চক্র নিয়মিত হত্যা ক'রে উদ্বেলিত কুসুমের
পাপড়ি ধুমসো কালো ক্ষানিক অস্তিত্ব রেখে গেলে --
আমিও রক্তের মধ্যে দশ হাজার বছর পুরনো হত্যাকারীকে
বাঁচিয়ে রাখি দ্বিতীয় কোন দৃশ্যর প্রয়োজনে 





প্রতিদ্বন্দ্বী 



একটা জোনাকি জ্বলতে না জ্বলতে রাহুহত চন্দ্রিমা
জেগে উঠে বলল 'বিদায় হ ' ,
এই দেখে খেতের রজনীগন্ধা বেদনায় নীল হয়ে
ফুল ঝরিয়ে দিলো দু'চারখান ।

জানি , পরিপক্ক আপেলের মুগ্ধতা তোমার সামন্ত্রতান্ত্রিক
চোখে , প্রত্যেকটা প্রথাবিরোধী আঁধার ভাঙবার চিরন্তন
শখ , একশত কুড়ি কোটি জোনাক ম্লান থেকে ম্লানতম হয় 

তোমারই এক অঙ্গুলি হেলনে ---
যেন প্রাগৈতিহাসিক গ্রীকদেবী নতজানু মাথায় তোমার
যতসব অহংকার ।

তোমার ঘোরতম প্রতিদ্বন্দ্বী আমি , জন্মজন্মান্তরের মুগ্ধ
মানচিত্রে তোমার জ্বলজ্বল বুকের উপর সেঁটে দেবো পোস্টার
বুড়ো হয়েছ ঢের ছাড় , ছাড় অধিকার , যৎসামান্য জোনাক
আলো এখনও প্রতিদ্বন্দ্বী তোমার !











কবিতা লেখা 

যে রাতে কবিতা লেখা হয় 
ভয়াল পৌষ ইঁদুরের গর্তে সাপ ঘুমে
নিরিবিচ্ছিন্ন বোরো ধানের গুচ্ছে চুপি চুপি শিশির
লিখে রাখে জন্ম-পরিচয় 
ঘন মেঘের পর্দায় নিরুৎসাহী জ্যোৎস্না ঢিমে পায়ে চৌধুরীদের
বাঁশবাগান পেড়িয়ে কানাপুকুরে লীন , 
তক্ষনি , জলে -পাতায় একটা নক্ষত্র দুলে ওঠে 
কবিতা তখন " ফুল্লরার বারোমাস্য "র বিরহ পর্ব । 

সমগ্র রাত ধরে হাওয়ার পরিচলন 
মেধহীন রাতের তৃতীয় প্রহর জুড়ে চরাচরে আণবিক বিস্ফোরণে
কবির ন্যায়-নীতিবাক্য শব্দের ধুলোই মাখামাখি , যেন
রাত জানতে চাই " ওহে কবি , প্রসব বেদনার মত 
ব্যথাতুর হতে পেরেছেন কবিতায় " , 

হরিহর প্রাতঃকাজে খোলা মাঠে বদনা হাতে --
নেশাতুর রাত ডুবছে রাহুকালে 
শব্দকীট চেয়ে আছে কবিতার দিকে --
এক কলাম ভণিতা লিখেছেন কবি সারারাত 
পিশাচ খেয়েছে অস্থি খেয়েছে মজ্জা 
অক্ষরের অমরত্ব 
বিদীর্ণ আলোর নিচে মৃতপ্রায়  

সামগ্রিক পতনে কথা নেই , ভাষা নেই , নির্বাক পৃথিবী এসাইলাম ।


অবাক 



সমস্ত কথা বলা হ'য়ে গেলেও
আরো কথা র'য়ে যায় মনের পাদদেশে অসন্তোষে ,
পুনরায় গাছের শ্বাসে সময়ের ভাস্কর্য যেন ফলিত বিজ্ঞান
বহুশ্রম শীর্ষসঙ্গীত মন্তাজ অহরহ বিরহ চিহ্ন রেখে যাই মনে ।

যে যেমন পারে দড়ি ধরে সমুদ্র মাপে ,
মুখের ছেঁদ বিন্দু খুলে শাসনের ভঙ্গীতে নিজেকে প্রতিষ্ঠার আপ্রাণ
চেষ্টা , আদিম শিল্পের সহজতর পদ্ধতি 

লক্ষ্যচ্যুত হ'লে এমন মনগড়া হাজার ভাষণ !

সমগ্র সম্ভাষণ ওঠা-পরা ছায়াছবির মত আসে যাই
রসালো ক্ষণের পরতে পরতে অবিশ্বাস ধুলো-বালি --
গগলস চোখে সম্মুখের দৃশ্যই গোচর , অদ্ভুত প্রত্যয়ে
সমস্ত অবক্ষয় নিয়ে ধান কাটা দিন আসে --
আসে বিপন্ন বিস্মিত ভবিষ্যৎ ।

বুঝি , সমগ্র পথ এবং অরণ্য , চারণভূমি্‌ ,কৃষিক্ষেতের ইজারা নিয়ে
পুরো দস্তুর সাংসারিক জগত প্রসিদ্ধলব্ধ এক বধ্যভূমি ,
ঐ দিকে মন্ত্রপূত জল যজ্ঞডুমুর বেলপাতা সমিধ আগুন
অভয়ারণ্য দিয়ে গেলে সেদিকে শূন্যতা ।

সমস্তই দিয়ে গেছে সম্রাট , সূচনাপর্ব হতেই অবক্ষয় ।
এত সৃষ্টি গহ্বর , ভাতে রক্তের দাগ , বুঝি অন্তিম অধ্যায়ে এবার 

গর্ভদেশ ভাঙার চিহ্ন ।







দশ ৪


পুনর্জন্ম 


সাদা হাঁসের ডানাই রোদ নাচে , কি মুগ্ধতায়
দিন আসে , মুহূর্তে পালাবদল গাছে- মাঠে-
বেলা হেসে ওঠে , দু'হাতে মহাজাগতিক জীবন
দু'হাতে মৃত্যু , সময়ের গৃহীত গভীর খাদে
ডুবে যাই চণ্ডাল বেদনা তবুও জেহাদী যৌবন
দেখেছি কি কোন সুন্দর অভ্রান্তের ছবি ?
যে প্রেম চেনাবে ! শরীরে শরীরে শুধু দাগ কণ্ঠে
নিরুদ্বেগে কান্নাধ্বনি পদস্খলন লেখা থাকে কাষ্ঠ

খণ্ডে আগুনে আগুনে আর যাকিছু পুনর্জন্ম সবই
স্থিতিশীল স্থিতিস্থাপক ভঙ্গিমায় , মানা এবং না মানা
সমস্ত বৈষয়িক রন্ধে আনুপাতিক অর্থ হুন্ডি কেউ
কেউ তুলে নেন , আমার জানা জগত যাবতীয়
উদ্যোগের রসায়ন ভস্মীভূত , পার্থিব সন্ধি যাপন ছায় ।
জীবনে আর বন্দীমুক্তি খেলা নেই যা সময় চেনাবে
উভয়মুখী বন্দ প্রকোষ্ঠে তবুও মুক্তির সেই আবেদন
গেল না জন্মেও , তুমিই প্রতিষ্ঠা করেছ জীবন
রঙ্গমঞ্চে কাঠপুতুল সুতো সবই সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম
তোমারই গর্বিত চেতনার ইচ্ছাধীনে ।
পৃথিবীকে এবার শয্যা ক'রে তোল , পতনের ক'তো
সংকেত লিখে রেখেছ তুমি - একটাই লটকে দাও
আমার শরীর - কি জানি এরপর পুনর্জন্ম








 রূপান্তর 


বহু ফসলী রূপান্তরের দিকে চলে গেছো তুমি
বীজের খোলস ছড়িয়ে -ছিটিয়ে
জলের ঘূর্ণনের মধ্যের স্থির অন্ধ প্রত্যাশায় পারদে
বসে সুনীলের গভীরতা দেখি
কোন এক গন্ধক সন্ধ্যায় বিশুদ্ধ গণিতের সুদকষা নিয়মে
যদি ফিরে আসো
যদি ফিরে আসো আত্মমন্থিথ হৃদয়ের গোপন অন্দরে ।

তাবৎ জীবন ধরে নিষিদ্ধ মারিজুয়েনার নেশাতুর বাস্তব
অন্ধগলি পথে ভুঁইফোঁড় অভিযোজনে
অঙ্কুরোদ্গম বীজের সোনালি ফসলের আকাঙ্ক্ষায়
বিশৃঙ্খল খেতে- খামারে
কৃষকের স্বপ্ন চোখে নবান্ন রাতের মত চেয়ে থাকি
এক ঈশ্বরী কন্যা যেন
বিনুনি চুলে নেমেছে তোমার ঘরোয়া সন্ধ্যা
ঠিক সাওতাল রমণীর মত হাতে মাতির প্রদীপে
কামনিয় লালিত্য তুমি ।

বেদেনীর ঝুড়িতে বিষদাঁত ভেঙ্গে যতবার শেকল পড়িয়েছি
মার্জিত শাসনে --- আর যখনই অন্ধকার নেমেছে
তুমিও সকল বাঁধন খুলে কোন এক রুপান্তরে ।





পরাজয় 

প্রেম , তোমাকে ধরতে পারিনি বলে
মাঝিমল্লার কণ্ঠে এলো ভাটিয়ালি , চরার
একপ্রান্তে এক পায়ে গ্রীবা উঁচিয়ে বক
শুনলো বিষাদ সঙ্গীত
প্রসিদ্ধ হোল কবির দৃষ্টিতে দৃশ্য ;

বিচিত্র লীলাচলে অঙ্কিত চিত্রিত পড়ে থাকে ঢেউ ,
খোঁজ , বৈচিত্র্যর যে পথ 

ঘুরছে লতাপাতায় দুনের পাইনতলে লোমশ ভেড়ার
পায়ে পায়ে ;
এই দুপুরে বৃষ্টি নেই বলে ফিরে এসো না
বন্দিত জানুতে ধরো , ধরো
প্রপাতের ধ্বনি , তাকেও কেউ প্রেমই বলে জানে ,

করতলে উচাটান কবি , করতলে প্রেম ,
করতলে শিলালেখ পড় ;
প্রত্যাশার আড়ালে কবিতা রেখে প্রেমের সুলুকসন্ধানে
কোথায় নামবে তুমি ?

কবি মরে যায় , কবিতার প্রান্তিক প্রান্তে প্রেমের বাস
ভাটিয়ালির বিষাদে এবার প্রেমের জয় হয়


ব্যক্তিগত 


প্রবল ব্যক্তিগত ভাবে বেঁচে আছি ,
কারুর দাক্ষিণ্য ছাড়া ভিড় ট্রেনে ওঠাই যাই না ,
একটুখানি পা-দানি পেলেও বহুচর্চিত শরীর
ধনুকের মত বেঁকে ঠিক তৎপরতাই শব্দভেদী বানে
ঘায়েল করতাম যাত্রী ;
অবশ্য আমি পারিনা বলেই সকলে নিরামিষ মার্জার নয়
কাঁটা বাছতে শেখেনি ইলিসের !

এসব দেখতে দেখতে প্রবল ব্যক্তিগত ভাবে বেঁচে আছি ,
শরীরের সমস্ত অঙ্গ ব্যক্তিগত রেখে তর্জনী শুধু গণতন্ত্রে ,
সমগ্র পতাকাতলে হাত নারি , সমস্ত সঙ্গীতের কোরাসে
হাঁসের মত প্যাক প্যাক করি রক্তের গতি ঠিক রাখতে

বায়ুর প্রাবল্য নিয়েই প্রবলভাবেই আছি ব্যক্তিগত দিনপাতে ।
সেন্সেক্সর উত্থানপতন জি ডি পি ক্রাইম রিপোর্টে
নাম নেই দেখেই বুঝি ---
যারা বোঝেন তারা জনতায় আছেন , আমি প্রবল ভাবে
আছি নিজের খোলসে নিজে , প্রবল ভাবেই আছি ----------


৪৭ 

নির্বিষ একটা সাপ
বীণ ঠোঁটে সাপুড়ে
ফোঁসফোঁস ও করছে না
না দিচ্ছে ধরার আমন্ত্রণ
ভিক্ষুকের থলের মতন
নিস্পলক চেয়ে আছে ।

সেই সাতচল্লিশ থেকেই চেয়ে আছে 

যেন কোন বশীকরণ
হাত পড়বে তার মাথায়

আর
প্রলয়ের কোন এক রাতে
কেউ বলবে
কি হয়েছে তোর ? মন খারাপ ?



হে 





হে তরুণ , হে মধ্যরাতের সন্তান
দৈব-দুর্বিপাকে বুঝি মিলেছে কুষ্ঠীর সাথে
স্বাধীনতার শালীনতার ভোর ;
ঢের বুলেট রক্ত খেয়ে ক্ষ্যান্ত হ'লে শুক্লপক্ষ
ভেঙ্গে নবারুণের পূর্বের ঈশারা , আর
কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যভেদে দৃঢ়সংকল্পে
নদী পাহাড়-পর্বত জীবনের উষ্ণতা
ভালোবেসে স্থির প্রতীক্ষায় , যেন বলে 

ব্যবহার করো , ব্যবহার করো আমায় ।

হে তরুণ , হে মধ্যরাতের সন্তান
পরিচয় লিপিতে নামের বদলে দেশ আঁকো ,
এই দুর্দিনে পাথর ভাঙো বুকের ---
প্রত্যেকটা মধ্যরাতে
জরুথুরু পৃথিবী ঘুমিয়ে গেলে ------
দীর্ঘ উচ্চারণে ঘোষিত হোক
আজ তোমার জন্মদিন !








জাদু সড়ক

কি ভাবে অস্বীকার করবো আমি জন্ম পুনশ্চঃ জন্মদাগ ,
নিস্তেজ ডোরল্যাম্পের আলোতে যতই নিসর্গ
কত গুলি বিন্দু আঁকি স্রেফ নিজেকে ভাওতা দিয়ে , অথচ
ক্রমাগত তোমার সেই চোখ , হাড়মাস খুবলে খাওয়া
চোখ কি করে ভাবি এখন বর্ণান্ধ ?
এখন যখন বিদ্যুৎচুল্লীতে দাউ দাউ পুড়তে থাকে পুড়তে থাকে
করোটি ব্রহ্মতালু স্পর্শকাতর সমস্ত অঙ্গ 

দূরে গঙ্গাপারে শেয়াল ক্ষুধায় ডাকতে থাকে ডাকতে থাকে --
থাম , থাম তোরা থাম
এখনও ঢের রাত বাকি ঢের শরীর তোদের প্রতীক্ষায় ।

ক্রমশঃ যৌথ কারবারে লিপ্ত হয়ে উঠি , তোমার উপেক্ষার
শরীর চাটতে চাটতে একটা মৈথুন সংস্রবের প্রতীক্ষায়--
হাজার বারের এই পাপ জন্মে যতই তুমি কুণ্ডলীকৃত জল দাও
হোমের আগুনে শুদ্ধ করো বুক
দেবী , থাম্বে না , থাম্বে না এ জ্বলন ।

ক্ষিদে , গভীর ক্ষিদে নিয়ে তলিয়ে যাচ্ছে অপরাহ্ণের সূর্য ,
হঠাৎ হঠাৎ অদ্ভুত সমুদ্র মুদ্রা নিয়ে দাঁড়িও না সামনে
আমার এই পিশাচ , এই পিশাচ চোখের সামনে
তোমার ঐ রক্তের লোভ দেখিও না আদিম লালসায় ,
এ কোন সড়ক দিয়ে চলছ তুমি আমি হাজার ক্রোশ দূরে
সমগ্র কোলাহল থেকে রক্তের উত্তাপ থেকে --

এভাবেই নেপথ্যচারিণী কোন ভাগাড় পথে ফেলে যাও আমায় --
রোজ আমার হত্যা রক্তে বুঝি সূর্যস্নান
আর স্পষ্টত পাল্টে যাচ্ছে বুঝি আসমুদ্র-হিমাচল
স্পষ্টত বুঝি গুমোট অহংকারে তোমার বুৎপত্তি !







স্বাধীনতা 


প্রভুত মনস্তাপের নাম স্বাধীনতা
জিহ্বায় অদ্ভুত মমতায় উচ্চারণের নাম স্বাধীনতা
মুরগি ডাকা ভোরে কৃষকের লাঙল কাঁধে তোলার নাম স্বাধীনতা
পার্কে প্রেমিক যুগলের ঠোঁটে ঠোঁটে চুম্বনের নাম স্বাধীনতা
প্রবাহিত নদীর ধারার নাম স্বাধীনতা
দাতব্য চিকিৎসালয়ের সেবিকার হাতের স্পর্শের নাম স্বাধীনতা
অটো ড্রাইভারের রাত বারোটাই প্রসূতিকে হাসপাতালে পৌঁছে দেবার নাম স্বাধীনতা
অন্ধ নজরুলের ট্রেনে বা

দাম বিক্রির নাম স্বাধীনতা
ক্লাবে রক্তদান শিবিরের নাম স্বাধীনতা
প্রত্যেকটা আমন খেতের নাম স্বাধীনতা
গঙ্গাঘাটে মহালয়া পিতৃ তর্পণের নাম স্বাধীনতা
লক আপে থার্ড ডিগ্রি পাঁচনের নাম স্বাধীনতা
ধর্ষিতার হুজুর আমার মাই-বাপ এর নাম স্বাধীনতা
টিভিতে যৌনবর্ধক বিজ্ঞাপনের নাম স্বাধীনতা
এ অথবা ইউ সার্টিফিকেট প্রাপ্য ফিল্মের নাম স্বাধীনতা
কালাহান্দি আমলাশোলের যক্ষ্মার নাম স্বাধীনতা
ফেস্টুনে ফেস্টুনে ছাদে পতাকার নাম স্বাধীনতা

আমার স্বপ্নের নাম স্বাধীনতা
আমার দেশের নাম স্বাধীনতা
আমার ভাই এর নাম স্বাধীনতা
আমার ভাতের নাম স্বাধীনতা

আমার বুকের মাঝে স্বাধীনতা , আমার পেটের নাম স্বাধীনতা
আমার মুখের ভাষা স্বাধীনতা , আমার কবিতার নাম স্বাধীনতা








ফাইট 


অবশেষে পড়ে আছি ধান খেতে ।
একটু আগে দ্রাম দ্রাম
দিক্বিদিক গোলা-গুলি
আর্ত চিৎকার
পাশে শুয়ে আছে পলাশ
রক্তে মাখামাখি মুখ
কালো জমাটবদ্ধ রক্ত-জলে-কাঁদায়
আঃ বেঁচে আছি ! 


আশ্চর্য
তিনটে বুলেট ধরেছে শরীর
দুটো পেটে একটা বুকের বা পাশে

আস্তে আস্তে বন্ধুরা ঝিমিয়ে পড়ছে
ডাকছি প্রাণপণ পলাশ দীপক ওঠ
এখনই নামতে হবে পথে

ওরা ওঠেনা দেখে শেষমেশ আমি উঠে পড়ি
এখন অনেক পথ দিতে আছে বাকি পাড়ি

পুনশ্চঃ প্রভাতী ব্রেকিং নিউজ
কাল রাতে গান ফাইটে -- স্থানে আমন খেতে
পড়ে আছে একটা লাশ
সন্দেহ হচ্ছে অন্য সাথী'রা পালিয়েছে ।